একজন মানুষ, নবী এবং শেষ নবী, যাঁর নাম মুহাম্মাদ (স:)। বিশ্বের মানুষ তাঁকে নানাভাবে মূল্যায়ন করেছেন, কত বিশেষণে বিশেষিত করেছেন। স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে বলেছেন, রাহমাতুললিল আলামিন। আসলেই তিনি সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ। শেষ নবী এমন একজন নবী, যাঁর নির্দেশনা এবং কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে আস্থাহীনতার বর্তমান সভ্যতায়ও আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থায় ফিরে আসতে পারে কাক্সিক্ষত শান্তি, সমৃদ্ধি ও মৈত্রী। আজ বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন যে, নবী মুহাম্মাদ (স:) শুধু আমাদের প্রাত্যহিক ইবাদাত-বন্দেগীতেই প্রাসঙ্গিক নন; তিনি মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবনায়, সম্পদ আহরণ ও বন্টন চেতনায়, ধর্ম-বর্ণ ও ভাষা বৈচিত্র্যে, জলবায়ু ও প্রকৃতি প্রজ্ঞায় দিতে পারেন সঙ্গত দিশা। অথচ এমন একজন নবীর অনুসরণ থেকে আজ আমরা কত দূরে!

আমরা আলোকিত সমাজের আকাক্সক্ষা প্রকাশ করে থাকি। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন যে জ্ঞান, সে জ্ঞান আমরা কতটা ধারণ করছি? বর্তমান সেক্যুলার সভ্যতায় তো আমরা জ্ঞান বলতে শুধু মানবরচিত জ্ঞানের কথা বুঝে থাকি। কিন্তু এর বাইরেও যে অভ্রান্ত আর একটি জ্ঞান আছে, ‘ওহী’ যার নাম, সে জ্ঞানের সাথে আমরা কতটা পরিচিত? এ ক্ষেত্রে অজ্ঞতার কারণে মানবরচিত খণ্ডিত জ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমরা সংকটের মাত্রা বৃদ্ধি করছি, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছি। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্বপরিস্থিতিই তার বড় প্রমাণ। বর্তমান সংকটের বিজ্ঞান ও ওহীভিত্তিক বিশ্লেষণের একটা দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর ওপর বর্তায়। কিন্তু সে দায়িত্ব পালিত হচ্ছে কী? এ ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। তাই প্রয়োজন আত্মসমালোচনার মাধ্যমে সঙ্গত দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা। শেষ নবীকে অনুসরণের মাধ্যমেই তা সম্ভব।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, রবিউল আউয়াল মাস এলে আমরা নবী (সা:)কে নিয়ে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। এসব অনুষ্ঠানে আবেগের কথা থাকে, ভালোবাসার কথা থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো নবী (স:)কে ভালোবাসার প্রকৃত পথ কী? সম্মানিত সাহাবারা তো নবী (স:)কে সবচেয়ে বেশি ভালো বাসতেন। তাঁরা তো জীবনের সবক্ষেত্রে প্রিয় নবীর সুন্নাহ ও কর্মপদ্ধতির অনুসরণের মাধ্যমে প্রকৃত ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। সাহাবাদের সে পথ অনুসরণ করাই কি আমাদের জন্য সঙ্গত নয়? আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন, শুধু রবিউল আউয়াল মাসেই নবীচর্চা সীমিত থাকবে কেন? নবী (স:)-এর পথনির্দেশনা তো ঘরে-বাইরে জীবনের বিচিত্র সম্পর্ক সূত্রে প্রতিদিনে, প্রতি প্রহরে খুবই প্রাসঙ্গিক। উম্মত হিসেবে বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৈন্য দূর হলে আমরা সমৃদ্ধ হবো। আর তা হলে বর্তমান সভ্যতায়ও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ইনশাআল্লাহ।