অক্টোবর মাসের শুরুতে দু’প্রতিবেশী ও ভাতৃপ্রতীম দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষ একটি পূর্ণমাত্রার সংঘাতে রূপ নেয়া আটকাতে আলোচনার জন্য গত শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দু’দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কয়েক দিন আগে দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে সীমান্তে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ থামানো। সীমান্তে ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। আলোচনা এক পর্যায়ে ভেঙে যাওয়ার পর আবার তা শুরু হয় এবং আবারো উভয় দেশ যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে খবর। আমরা এ যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে শুক্রবার বলা হয়েছে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান কমপক্ষে আরো এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তুরস্কে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার সময় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মধ্যস্থতাকারী দেশ তুরস্ক ও কাতারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা চূড়ান্ত করার জন্য আগামী ৬ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে আরো একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ‘সব পক্ষ একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকরণ ব্যবস্থা স্থাপনে সম্মত হয়েছে। যা শান্তি বজায় রাখা ও কোনো পক্ষ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলে তার ওপর শাস্তি আরোপ নিশ্চিত করবে।’ চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে এক বোমা বিস্ফোরণের পর দুই প্রতিবেশী দেশ সপ্তাহব্যাপী সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ওই বোমা বিস্ফোরণের জন্য আফগান সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করে। পরে সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ২০০ জনেরও বেশি আফগান যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে।
২০২১ সালে তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পর থেকে এটি ছিল দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সংঘাত। পরে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতার ফলে ১৯ অক্টোবর দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করেন। দু’দেশ শনিবার ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করে। কিন্তু উভয়পক্ষই বুধবার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী, যা পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) নামে পরিচিত। এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান তার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু আফগানিস্তান বরাবরাই তা অস্বীকার করে আসছে। বৃহস্পতিবার দু’দেশের মধ্যে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে এবং আগামী ৬ নভেম্বর নতুন দফা আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে।
আমরা মনে করি এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত, যা দুটি প্রতিবেশী মুসলিম দেশের হানাহানি বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আমরা আরো মনে করি যুদ্ধ কোন সমাধান নয়, তাতে রক্তপাত আর মৃত্যুই ডেকে আনে। এ মৃত্যু বন্ধ করতে আলোচনার কোন বিকল্প নেই। দুটি প্রতিবেশি দেশের মধ্যকার সংঘাত অবসানে তুরস্ক ও কাতারের ভূমিকাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি স্থায়ী সমাধান বের করে আনা সম্ভব। আমরা স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হোক তা কামনা করি।