ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে আগামী ৫ আগস্ট। গত বছরের জুলাই মাসে আন্দোলন-সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলো স্মরণ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে তারা। নানা কর্মসূচী নিয়েছে সরকার। এরই মাঝে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অনেক শিশু-কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নাড়া দিয়েছে সবাইকে। গণভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে যে বিষয়টি এখন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে দেশের ঐক্য ও সংহতি।
আশার কথা, সে আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কথায়। নানা ঘটনা পরম্পরায় দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দু’দিনে ১৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তিনি সকলকে ফ্যাসিবাদের রিুদ্ধে ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। দৈনিক সংগ্রামসহ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে’।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈঠকে অংশ নেওয়া সকল দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানায়। তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরও নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান। তারা বলেছেন, দেশে পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে এবং গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে। তারা বলেছেন, সরকারের উচিত প্রশাসনকে আরো কঠোর এবং সমন্বিত করা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান থাকবে না, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য অটুট থাকবে এবং দেশের প্রতিটি স্থানে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
প্রথম দিনের বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও হামিদুর রহমান আযাদ; জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। পরদিন অংশ নেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির তানিয়া রব, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স ও গণফোরামের মিজানুর রহমান। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। একইসঙ্গে নেতারা যেখানেই ফ্যাসিবাদ, সেখানেই সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলার ঘোষণাও দিয়েছেন। তাদের এ ঘোষণা জাতিকে আশ^স্ত করবে বলে আমরা বিশ^াস করি।
আমরা মনে করি রাজনীতিতে একে অপরের সমালোচনা করবে দলগুলো। গণতন্ত্রে এটাই স্বাভাবিক। তবে তা শালীন হওয়া উচিত। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিবাদী শক্তি যেন আবার উঠে দাঁড়াতে না পারে সে ব্যবস্থা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর থাকা দরকার। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য জোরদারের যে আহ্বান তাকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রধান উপদেষ্টার সাথে এই ধরনের বৈঠক নিয়মিত হোক সেটা আমরা চাইব। আমরা আশা করি, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই ঐক্য অটুট থাকবে। আর তা হবে দেশের মঙ্গলের জন্যই।