আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর দেশটির একটি সিটির মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। তুলনা করতে গেলে বলতে হয়, দু’জনের মধ্যে পার্থক্য বা ব্যবধানটা অনেক অনেক। একজন গোটা দেশের প্রেসিডেন্ট, অন্যজন একটি সিটির মেয়র পদে বিজয়ী হবেন মাত্র। কিন্তু মামদানির বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে, যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বড় কিছু ঘটে গেছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ট্রাম্পের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে মার্কিন জনমনে এক ধরনের মিথ তৈরি হয়েছে। মিথটি হলোÑ ‘ট্রাম্প সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।’ কিন্তু ট্রাম্পের স্পষ্ট বিরোধিতার পরও নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট ও মুসলিম জোহরান মামদানির ভূমিধস বিজয় সেই মিথে প্রবল আঘাত হেনেছে। ট্রাম্পের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের প্রতি ছুঁড়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মাঠে ট্রাম্পকে বিপদে ফেলতে পারে। এ কারণেই জোহরান মামদানির বিজয়কে বিশ্লেষকরা একটি বড় ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে দেশ শাসন করছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল তাকে থামানোর মতো কেউ নেই। ট্রাম্প তার ক্ষমতাবলে এমন অনেক কাজ করেছেন, যা আইন ও রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। তিনি অনেককিছুতেই অতিরিক্ত মাত্রায় নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগ করেছেন। গত এক বছর ধরে রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকা ডেমোক্র্যাটদের বড় ধরনের জয় হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। নিউইয়র্কের মেয়র ছাড়াও ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির গভর্নর পদে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা। আর এ জয়ের পরপরই ট্রাম্পের জরুরি শুল্ক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। শুধু তা-ই নয়, তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের সুযোগ দেবে না সংবিধানÑ এ বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্পর্কে। উল্লেখ্য, গত বছরের একই দিনে ভার্জিনিয়া ও নিউজার্সিতে ট্রাম্প ও তার ‘মেগা’ রিপাবলিকানরা জয়ী হলেও এবার হয়েছে ভরাডুবি। আর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন প্রত্যাশার চেয়েও বড় সাফল্য।

মেয়র নির্বাচনের আগে ও পরে জোহরান মামদানিকে নিয়ে ট্রাম্প এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে যায় না। তিনি বলেছেন, মামদানি বিজয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। এমন কথা বলেছেন নির্বাচনের ঠিক আগের দিন। আর জয়ের পর বলেছেন, নিউইয়র্কে মামদানির জয়ে সামান্য হলেও সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে আমেরিকা। এমনকি মামদানির জয়ে নিউইয়র্ক কমিউনিস্ট শহরে পরিণত হবে বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। তার মতে, এই শহর পরিণত হবে কমিউনিস্ট কিউবা এবং সমাজতান্ত্রিক ভেনেজুয়েলায়। ফলে ফ্লোরিডায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে নিউইয়র্কবাসী। এদিকে নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি জানিয়েছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে একসঙ্গে কাজ করার উপায় নিয়ে ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করতে চান তিনি। মামদানির বক্তব্য খুবই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। আর এখানে বলে রাখা ভালো যে, জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে, দরিদ্র মানুষের মুক্তি নিয়ে কথা বললেই কোনো রাজনীতিবিদ কমিউনিস্ট হয়ে যান না।