মনসুর আহমদ
বর্তমান বিশ্বের দিকে নজর দিলে সর্বত্রই সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সুশাসনের অভাবে আজ বিশ্বমানবতা চরমভাবে অবহেলিত, নির্যাতিত ও পদদলিত। বিশ্বময় আর্তনাদ উঠছে দুঃশাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি লাভের জন্য। দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে পৃথিবীতে কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এ চিন্তা আজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলছে। কয়েক বছর আগে ‘ইন্টার ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর এ জাস্ট ওয়ার্লড জাস্ট’-এর প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. চন্দ্র মুজাফ্ফর বলেছেন, ‘একটি সুন্দর সুষ্ঠু ও ন্যায়পরায়ন সমাজ গঠন করতে হলে রাষ্ট্রব্যস্থাকে ধর্ম ভিত্তিক অথবা ধর্মনিরপেক্ষ হতেই হবে তা কোন পূর্ব শর্ত হতে পারে না।’ তিনি রাষ্ট্র কাঠামোতে ধর্মীয় অথবা ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার পরিবর্তে সার্বজনীন আধ্যাত্মিক নৈতিক মূল্যবোধের উজ্জীবন আশা করেন। তার কথায় এ আধ্যাত্মিকতাকে কোনভাবেই ধর্মীয় অর্থডোক্সি দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা চলবে না। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক যে জীবন তা অবশ্যই পরিচালিত হতে হবে নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা, ধর্মের চেতনার আবশই মূল্য রয়েছে, সে জন্য ধর্মভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রয়োজন নেই।
রাষ্ট্রদর্শনের বিভিন্ন মতবাদের মোকাবেলায় ড. চন্দ্র মুজাফ্ফরের বর্তমান রাজনৈতিক চিন্তা ধারা কতটুকু কার্যকর হতে পারে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। বিশ্বের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যস্থায় এক দিকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রবাহ অন্য দিকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা পরিত্যাগ করে নতুন তৃতীয় ধারা সার্বজনীন আধ্যাত্মিক নৈতিক মূল্যবোধ ভিত্তিক রাষ্ট্রদর্শন কতটুকু বৈজ্ঞানিক ও যুক্তি ভিত্তিক তা অনু সন্ধানী দৃষ্টিতে দেখা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রদর্শনে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সৃষ্টির মূলে কি ধর্মের অচলতাই কারণ ছিল? ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় পশ্চিমা জগতে ক্যাথলিক চর্চের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছিল মধ্যযুগের সংস্কৃতি। শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব ছিল যাজক সম্প্রদায়ের হাতে, আর শিক্ষার বিষয় ছিল কেবল ধর্মতত্ত্ব। ফলে বিদ্য চর্চা যাজক সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। পুরোহিত শাসিত সামন্ত তান্ত্রিক সমাজ মধ্য যুগের শেষের দিকে কৃষি ও শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজ জীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তার সাথ খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি।ফলে ধর্ম তথা পুরোহিত শাসিত সমাজ ব্যবস্থা পরবর্তি সমাজ ব্যবস্থায় অচল হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় শক্তির কাছে নতজানু হয়ে পড়ে চার্চের সুদীর্ঘ কালের উন্নত মস্তক। আর এ ভাবেই রাজনৈতিক জীবনে পুরোনো ধর্মীয়মূল্যবোধের ভিত্তি অবনমিত হল। আধ্যাত্মিক জীবনের ঊর্ধ্বে লোকায়ত রাষ্ট্রীয় জীবনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ধর্ম নিরক্ষেতাবাদ জন্ম নেয়। এ ভাবে পবিত্র খ্রিষ্টান ধর্ম রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক জীবন থেকে অন্তর্হিত হয় এবং ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে জাতীয়তার ভিত্তিতে ইউরোপে চরম রাজতন্ত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে ভৌগোলিক ও জাতিগত (Ethnic) ঐক্যের উপর যে শক্তিশালী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হল তার নিয়ামক ছিল পাশব শক্তি, যা রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে।
রাজতন্ত্রের সুশাসনের ব্যর্থতা পরবর্তীতে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতন্ত্র্রের আবির্ভাব ঘটায়।কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাও ঔশী চেতনা বিবর্জিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদকে গ্রহণ করে,যার মূল ধারায় বিদ্যমান ছিল ডারউইনের যোগ্যতমের টিকে থাকার নামে পাশব শক্তির উদ্বোধন। এ পাশবশক্তি বিশ্বময় যুদ্ধের অনল জ¦ালিয়ে চলছে।পরপর কতটি বিশ্বযুদ্ধ, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধ, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এক সম্প্রদায়ের সাথে অন্য সম্প্রদায়ের ধ্বংস যজ্ঞ ইত্যাদির মূলে রয়েছে ধর্মীয় চেতনাবিবর্জিত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ নীতি। রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ. সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজতন্ত্র, পশ্চিমা গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ যখন ব্যর্থ তখন মানুষ আবার ধর্ম তথা ইসলামভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করছে। কিন্তু ধর্ম বিরোধী শিবির পোপতন্ত্রের ব্যর্থতা, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের রাজনীতি বিবর্জিত ত্রুটিপূর্ণ ধর্মীয় অনুশাসন বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যর্থ প্রমাণিত হওয়ায় রাজনীতিতে ধর্মের ব্যর্থতার আজুহাতে ইসলামকে রাজনীতিতে প্রবেশের বিরোধিতা কর চলছে। কিন্তু উদার দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যাবে যে, ইসলাম এমন এক জীবন ব্যবস্থা যার রয়েছে মানব জীবনের সর্বদিকের নিয়ন্ত্রণ বিধান। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি সব কিছুকেই ইসলাম সংরক্ষণ করে এবং এগুলিকে মানবের কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। যে কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা এক মাত্র ইসলামের রয়েছে। এ কারণেই ড, চন্দ্র মুজাফ্ফর বিশ্বাস করেন, হজরত মুহাম্মদ (স.) কিংবা খোলাফায়ে রাশেদার যুগে যদি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয় তা হলে বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগেও মানুষের পক্ষে সে রকম ন্যায়পরায়ণ ও সুশাসন ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। কারণ এমন রাষ্ট্রের মূল উৎস ঐশী বাণী।আইন মেনে চলার প্রবণতার মূল হল আগ্রহ ও ইচ্ছা, বল প্রয়োগ নয়। এ আগ্রহ ও ইচ্ছা গভীর ভাবে জাগ্রত হয় যদি আইনের উৎস হয় ধর্ম। এ সত্য ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামের প্রথম যুগে। তখন মানুষ অনেক সময় অন্যায় ও আইন ভঙ্গ করে নিজকে বিচার ও সংশোধনের জন্য পেশ করেছে রসুলুল্লাহ (স.)-এর সামনে। হজরত মায়িয বিন মালিক (রহ.) ও আয্দ বংশের গামেদীয় গোত্রের মহিলা নিজে;েদরকে পবিত্র করার জন্য নিজেদেরকে রসুলের সামনে পেশ, লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির ও তার ছয় সাথী, কায়াব ইবনে মালিক, হিলাল ইবনে উমাইয়া, ও মুরারা ইবনে রুবাইদের কৃত অন্যায়ের জন্য রসুলের সানে পেশ ও ঘটনা এ সত্য প্রতিষ্ঠা করে যে, ঐশী ভিত্তিক আইন পালনের ইচ্ছা মানুষের মনে পয়দা হয বাইরের কোর শক্তির প্রয়োগ ব্যতিরেকে। কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষ আইন মানুষকে তা মেনে চলার জন্য কখন এমন আগ্রহী করতে পারে না।
ড. চন্দ্র মুজাফ্ফর রাজনৈতিক দর্শনে তৃতীয় ধারা-সার্বজনীন আধ্যাত্মিক নৈতিক মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় সুশাসনের জন্য উপযুক্ত মনে করেছেন। সার্বজনীন আধ্যাত্মিক নৈতিক মূল্যবোধের ধারণা ধর্মকে আশ্রয় ব্যতিত গড়ে উঠতে পারে না। কারণ রাজনৈতিক আইন হল ব্যক্তিগত হৃদয়ের আবেদন, তার বিবেকের বিধান। বাইরের থেকে দেখলে মনে হবে নৈতিক আইন প্রথা ও সামাজিক শিক্ষার সৃষ্টি বিধান; কিন্তু বিধি হিসেবে তা হচ্ছে কোন দায়িত্ব শীল লোকের নিজস্ব রচিত বিধান। যে বিধান তার স¦াধীনতা সচেতনতার মঙ্গলের উপায়,ও উদ্দেশ্য বিচার করে বাছাই করা হয়েছে। নৈতিক আবেদনের মূলে রযেছে ব্যক্তির ন্যায়বোধ যা শেষ পর্যায়ে তার ভালমন্দ বোধে রূপান্তরিত হয়।
নৈতিক নিয়মের উৎপত্তি অন্ধ প্রবৃত্তি সামাজিক প্রথা প্রচলন কিংবা কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ নিষেধ থেকে নয়, বিবেক মানুষের অন্তরতম রিজন বা প্রজ্ঞা থেকে। আর তাই নীতিবান মানুষ মাত্রই চালিত হয় দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য বোধ দ্বারা। ব্যক্তির প্রজ্ঞা ও অন্তরতম রিজন:এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রজ্ঞা ও যুক্তির বিভিন্নতা স্বাভাবিত, তাই ধর্মাশ্রয়ী নৈতিকতাবিহীন নৈতিকতা কখন সার্বজনীন আধ্যত্মিক নৈতিকতায় রূপান্তরিত হতে পারে না। যে কারণে ধর্মভিত্তিক আইন ও নৈতিকতা ব্যতিত রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব।
আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা মনে করেন নৈতিকতার আওতা এবং রাজনৈতিক আইনের আওতা কোন দিক দিয়ে এক হতে পারে না। নৈতিকতা সব সময়ই হল ব্যক্তিগত এবং সমগ্র বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এর অনুধাবন সম্ভব। রাজনৈতিক ব্যাপারটা সামগ্রিক বিষয়ের একটা দিক মাত্র। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র কাঠামোতে ধর্মীয় চেতনা বিবর্জিত সার্বজনীন আধ্যাত্মিক নৈতিক মূল্যবোধের উজ্জীবন কতটা সম্ভব? উত্তর পেতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্কটা কী? আইন নৈতিকতার ক্ষেত্রে কোন নির্দেশ দিতে পারে না। আইন কেবল মাত্র বাহ্যিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং আইন শুধু ওইসব কাজকর্মের নির্দেশ দান করে যাদের সম্পাদন রাষ্ট্রের মতে সাধারণ মঙ্গলের জন্য সুবিধা জনক। কিন্তু এ কাজগুলি কী? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়-অবাধ বা নৈতিক ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বাহ্যিক ও সামাজিক পরিস্থিতির সুষ্ঠু উন্নয়নের জন্য যা দরকার তাই হল আইনের সে কাজদুলো। এ সাধারণ নীতির অবশ্য বিভিন্ন ব্যখ্যা হতে পারে এবং এ বিষয়ে আমাদের ভেবে দেখা দরকার। তবে এটা খুব স্পষ্ট যে,আইন নৈতিকতার সবটুকু স্থান জুড়ে থাকেও না, থাকতে পারেও না। সকল নৈতিক দায়িত্বকে আইনগত দায়িত্বে পরিণত করলে নৈতিকতা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে; সৌভাগ্য বশত তা হয় না। নৈতিক দায়িত্বের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পরিবর্তন শীল যে হাজারো পরিস্থিতির সংযোজন হয় আইনের দৃষ্টি তা আগে থেকে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয় না। এ ছাড়া সকলের জন্য থাকতে হবে একটি মাত্র আইনগত বিধি; কিন্তু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের সাথে তাল রেখে নৈতিক বিধান বিভিন্ন হতে বাধ্য। তাই ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবিহিীন সার্বজনীন নৈতিক মূল্যবোধের উজ্জীবন রাষ্ট্র কাঠামোতে অসম্ভব। রাষ্ট্রকাঠামোতে ওহী সঞ্জাত নৈতিকতা তথা দীনের উত্থাপিত জীবন বোধ ও নৈতিক মূল্য বোধ প্রতিষ্ঠিতহওয়া সম্ভব, আর তা হলেই সুশাসনের পথ উন্মুক্ত হতে পারে। আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘একচ্ছত্র রাজতন্ত্র হোক আর তথাকথিত গণতন্ত্র হোক, তার শাসন ব্যবস্থার মূলে যদি দীন তথা ইসলামের আলো না থাকে তবে ঐ শাসন ব্যবস্থা চেঙ্গিসী বর্বরতাই সৃষ্টি করে।’
ব্যক্তির অন্তরতম রিজন বা প্রজ্ঞা সহজাত নৈতিকতা যেমন হতে পারে না সার্বজনীন তেমনি তা হতে পারে না রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তি বরং যে আইনের উৎস আল্লাহ তায়ালার ওহী এবং আল্লাহ তায়ালার প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত রসুল, সে আদর্শের সার্বজনীনতা ও সর্বোকালোপযোগিতা সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে। এখানে একটি কথা বলে রাখা আবশ্যক। ইসলামী আইনের উৎস অহী, কিন্তু তার প্রয়োগ মানবিক। আল্লাহ তায়ালা আইন জারি করেছেন আর মানুষ তা প্রয়োগ করছে। এ জারী ও প্রয়োগের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান। এ ব্যবধানের পরিসরে রয়েছে অনেক গবেষণা আনেক কৃতি। এ গবেষণা ও কৃতির ফলে আল্লাহর দেয়া আইন যুগে যুগে নতুন মোড় নিয়েছে। আর এ ভাবেই তা হয়েছে সর্ব কালের জন্য শাশ্বত আইনের উৎস।
সার্বজনীন আইনের আধ্যাত্মিক নৈতিকতার ভিত্তি হতে পারে কুরআন ও সুন্নাহ। এছাড়া ইসলামী আইনের অন্যতম ভিত্তি ইজমা, যা সার্বজনীন ঐক্য মতে গৃহিত। মুসলিম আইন মনীষীদেও মতে যখন একটা বিশেষ দেশে বিশেষ যুগে একটা প্রশ্নের সমাধানে মুসলিম মুজতাহিদগণ একমত হন,তখনই হয় ইজমা। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, একমাত্র ইসলামের রয়েছে সার্বজনীন নৈতিকতার ভিত্তিতে আইন প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা।
মানুষের নৈতিকতা পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য রসুল (সঃ)এর আগমন। তাঁর উপস্থাপিত নৈতিকতা তথা তাকওয়া ভিত্তিক আইনই হতে পারে রাষ্ট্রের সুশাসন প্রতিষ্ঠার এক মাত্র মূল শক্তি। এ কারণেই ড. চন্দ্র মুজাফ্ফর অবশেষে বলতে বাধ্য হয়েছেন,হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কিংবা খোলাফায়ে রাশেদার যুগে যদি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠন সম্ভব হয় তাহলে বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগেও মানুষের পক্ষে সে রকম ন্যায়পরায়ন ও সুশাসন ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা যে একমাত্র কোরআনের আইনকে রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণেই সম্ভব তা পশ্চিমা জগৎ ও স্বীকার করেছে। তারা কুরআন সম্পর্কে বলেন, on the whole we find in it a collection of wisdom which can be adopted by the most intelligent of men, the greatest of philosophers and the most skilful politicians. শক্তিশালী আদর্শ জাতি প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা রয়েছে ইসলামের। এ কথা স্বীকার করে বলা হয়েছে ; It embodies much of a noble and deep moral earnedtness,and sententious oracular wisdom, and has proved that there are elements in it on which mighty nations and conquering.. empires can be built up আজ তাই বিশ্বময় সুশাসিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমান ভিত্তিক আইনকে আশ্রয় করে নয়, বরং ওহিভিত্তিক ইসলামী আইনকে রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে সুশাসনের প্রতিষ্ঠার সফলতার উৎস।
লেখক : প্রবীণ প্রকৌশলী ও প্রাবন্ধিক।