পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তবে এ এলাকার মানুষ কাক্সিক্ষত শান্তি ও সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত। এর পেছনে রয়েছে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। ১২ এপ্রিল মুদ্রিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম হলো- ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নতুন চক্রান্ত ভারতের’। প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ভারত। এ কাজে লাগানো হচ্ছে জেএসএস, ইউপিডিএফ এবং কেএনএফের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের। দেশবিরোধী এ প্রকল্প সফল করতে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে তিন ভাগে। প্রথম ভাগে জেএসএস এবং ইউপিডিএফ-এর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীঅদের মধ্যে বিভেদ ছড়িয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে কথিত ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করা। এরই মধ্যে এ সংঘাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করা বাঙালিদের জড়িয়ে নেওয়া। সবশেষে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এক পক্ষকে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন শুরু করানো। যেখানে বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় অস্থিরতার চিত্র ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে দেখানোসহ সেনাাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রাধান্য পাবে। আর ক্যাম্পেইনের শিরোনাম হবে ‘পার্বত্য এলাকায় ইউএনমিশন পাঠানোর দাবি।’ এসব প্রক্রিয়া বিজু উৎসবের পর থেকেই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মকাণ্ডগুলো সমন্বয় করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক জনপ্রতিনিধিরা। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া একাধিক অস্ত্রধারীর স্বীকারোক্তিসহ পার্বত্য এলাকা নিয়ে কর্মরত একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব পরিকল্পনার তথ্য পেয়েছে।
প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশকে নিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ভারত। এ ষড়যন্ত্রের জঘন্য উদাহরণ পার্বত্য অঞ্চল তথা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা। ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ি এই অঞ্চল নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই। পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাংশকে ভুল বুঝিয়ে অধিকারের প্রশ্নে বিভ্রান্ত করে সন্ত্রাসের পথে নিয়ে যায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। তাদের অস্ত্র দিয়ে এবং সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত অব্যাহত রাখে ‘র’। শুরু থেকে এ সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নেয় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনীর অব্যাহত অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে শান্তিবাহিনী হিসেবে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম সশস্ত্র সংগঠন পার্বত্য জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কথিত শান্তিচুক্তির নামে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সীমিত করার ষড়যন্ত্রে সফল হয় ভারত। কথিত ওই চুক্তির কারণে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে ২৩৯টি সেনাক্যাম্প প্রাত্যাহার করা হয়। এতে ফের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায় পাহাড়ি অস্ত্রধারীরা।
একটি সংগঠন ভেঙ্গে এখন পাহাড়ে ৫টি সংগঠন সশস্ত্র তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এগুলো হলোÑ জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও কেএনএফ। এই সুযোগ লুফে নিতে শুরু করেছে ভারত। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিশোধ নিতে শুরুতে সংঘ্যালঘু কার্ড খেলে ব্যর্থ হওয়ায় এখন পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পুরানো কৌশল নতুন করে বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র করছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। এমন অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় সেনা তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। কিন্তু শান্তিচুক্তির কারণে সেনা তৎপরতা বৃদ্ধি এখন এক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়েছে। ফলে অন্যান্য বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বিশেষায়িত আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করে পাহাড়ের পরিস্থিতি মোকাবিলা করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশকে এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের কারণে। ‘তথাকথিত বন্ধু’ এবং ‘প্রকৃত বন্ধুর’ পার্থক্যটা আসলেই উপলব্ধি করার মতো।