যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্য আমদানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে গত বুধবার। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ৬০ টিরও বেশী দেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে আমেরিকা। এ ঘোষণা এখন সারা বিশ্বে আলোচনার বিষয়। বিশ্ব মোড়ল দাবিদার আমেরিকার এমন আচরণ সারাবিশ্বে নিন্দিত ও সমালোচিত হচ্ছে। অন্যান্য দেশও পাল্টা ব্যবস্থার কথাও ভাবছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ। বুধবার হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। নতুন শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮৪০ কোটি ডলারের মতো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়ে থাকে যার বেশিরভাগ তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ডলার। এমন শুল্ক আরোপে কম আয়ের দেশ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। দেশ দুটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি দ্বৈত কর এড়ানোর জন্যও চুক্তি করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল ৪৬ কোটি ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ০.৪ শতাংশ বেশি। ঊভয় সরকারের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। টিকফা বৈঠকের আলোচনায় বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার প্রবেশের সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারের ওপর জোর দেয়া হয়। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রায় দেড়শ’ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। এসময়ে দেশটি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে প্রায় ৫শ’ ৭০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য। (সূত্র: ইউএসটিআর)

বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভাবা উচিত। আশার কথা এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য, তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পেঁৗঁছাতে পারব।’ গত ৩ এপ্রিল ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এমন কিছু করবো যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে বলে জানান তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রেস সচিব বাংলাদেশী পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার বাড়ানোর বিষয়ে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক পর্যালোচনা করছে। এসব শুল্ক আরও যুক্তিসংগত করার উপায় খুঁজে বের করতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যা শুল্কবিষয়ক জটিলতা নিরসনে প্রয়োজন। প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আমাদের বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আমরা দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একসাথে কাজ করে আসছি।’ সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসার পর আমরা আশ্বস্ত হতে চাই। আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার একটি সুরাহা হোক।