গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগ মুহূর্তে সরকারি বাহিনীর দমন নিপীড়নের একটি ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে এক চিকিৎসকের ভাষ্যে। এ রকম একটি খবর গতকাল দৈনিক সংগ্রামসহ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য দিতে গিয়ে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো: মাহফুজুর রহমান বলেছেন, গত বছরের ১৯ জুলাই যখন রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল, তখন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) লোকেরা এসে নতুন গুলীবিদ্ধ ছাত্রদের ভর্তি না করার জন্য তাকে চাপ দেন। চব্বিশের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে আনা গুরুতর আহত ১৬৭ জনের বেশিভাগের মাথার খুলি ছিল না।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কতটা নির্দয় হলে এ পরিস্হিতি ঘটাতে পারে আমরা ভেবে পাই না। ছাত্রছাত্রীরা এবং সাধারণ মানুষ ছিল আন্দোলনের সামনের কাতারে। তারাই হামলা ও বুলেটের শিকার হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
খবরে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বুধবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাক্ষ্যদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। জবানবন্দিতে চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার বিষয়ে জানার পরে তিনি হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কায় প্র¯‘ত থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তাই পরি¯ি’তি মোকাবেলার জন্য পরিচালকের নির্দেশনায় একটি জরুরি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। ১৮ জুলাই থেকে হাসপাতালে গুলীবিদ্ধ রোগী আসতে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, রোগীদের মাথা, হাত, পা, পিঠ, মুখ ও গলায় গুলি ও পিলেট বিদ্ধ ছিল। গুলীগুলো ছিল বড় আকারের। ৪/৫ অগাস্ট যেসব রোগী আসে তাদের অধিকাংশের মাথা, বুক, মুখ ও গলায় গুলীবিদ্ধ ছিল। বেশির ভাগের মাথার খুলি ছিল না। আমাদের হাসপাতালে ৫৭৫ জন গুলী ও পিলেটবিদ্ধ রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গুরুতর আহত ১৬৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের বেশির ভাগেরই মাথার খুলি ছিল না। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। ২৯ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের প্রধান নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম তুলে ধরা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ যারা শেষ হাসিনার নির্দেশ কার্যকর করে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নিহত ও আহত করা হয়েছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি দাবিও করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আমরা মনে করি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ এসব গুরুতর অপরাধে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হওয়ার দরকার। তাদের কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া আবশ্যক। এ বিচারের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং নিহতদের স্বজনরা হয়তো একটু সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন।