দক্ষিণ এশিয়ার দু প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধংদেহি অবস্থার বিষয়টি এ মুহূর্তে বিশ্বে একটি বড় খবর। কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর পাল্টাপালটি পদক্ষেপে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনার মধ্যে চিরশত্রু দেশ দুটিতে রণ দামামা বাজিয়ে চলেছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বসে আমরাও যুদ্ধের ভয়াবহ বিপদের কথা ভেবে আতংকিত হওয়া ছাড়া গতি নেই। বিষয়টি চরম সীমায় পৌঁছেছে। আর তাই জাতিসংঘ মহাসচিব দ্রুতই সাড়া দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ নিয়ে দেশ দুটিকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এসব বিষয় নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমরাও মনে করি বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। দেশ দুটি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে সকলকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে স্ব স্ব দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবে এটাই আমাদের চাওয়া।

ঘটনার ঘনঘটা এটতা ভয়াবহ যে, গত ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতে আন্তোনিও গুতেরেসের এ বার্তা দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। খবরে বলা হয়, স্টিফেন ডুজারিক জানান, প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ‘খুবই উদ্বিগ্ন’। সার্বিক পরিস্থিতিতে ‘খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ রাখছেন তিনি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাল্টাপালটি বেশকিছু পদক্ষেপের ফলে দু দেশের মধ্যে সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আরও অবনতির দিকে না যায় এ জন্য দেশ দুটিকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে কোনো সমস্যা অর্থবহ আলোচনা ও পারস্পরিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী এবং এটাই হওয়া উচিত।’

গত ২২ এপ্রিল বিকালে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা ভয়াবহ হামলায় ২৫ ভারতীয়সহ ২৬ জন নিহত হন। এ হামলার জন্য পাকিস্তানের মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দোষারোপ করে পরদিন বুধবার প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিল ও সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ভারত। ভারতের পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের নাগরিকদের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বুধবার বেশ কয়েকটি পালটা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাল্টাপালটি এসব পদক্ষেপে দেশ দুটির মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে যা হয়তো সামরিক সংঘাতে গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারত দাবি করে-এটি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত একটি জঙ্গীগোষ্ঠীর কাজ। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে। ভারত বুধবার ঘোষণা করেছিল, ‘সার্ক দেশগুলোর জন্য ভিসা ছাড়’ প্রকল্পের আওতায় যেসব পাকিস্তানি নাগরিক বিশেষ ভিসা পেয়েছেন, তা বাতিল করা হলো। জবাবে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও ঠিক ওই একই ঘোষণা করেছে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য। এ ছাড়া ভারত সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। জবাবে পাকিস্তান আবার ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানের আকাশ সীমাও ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। এতে বিমান চলাচল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। আমরা পাল্টাপাল্টি দোষারোপের দিকে না গিয়ে বিষয়টির বিচার বিভাগীয় তদন্তের উপর জোর দিতে চাই।

খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান, একে অপরের বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ কড়া ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে। এ সব পদক্ষেপের মধ্যে দু দেশেরই ওয়াঘা-আটারি সমন্বিত সীমান্ত চৌকি বন্ধের ঘোষণার পাশাপাশি দুটি দেশই অপর দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের ঘোষণাও দিয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে গোলাগুলীর ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ এপ্রিল রাতে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে সেখানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলীর এই খবর এলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশটির সংবাদমাধ্যমে এখনও এ বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। সেনা সূত্রে জানা গেছে, এ গোলাগুলীতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গোলাগুলীর খবরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা আহ্বান জানাবো উভয় দেশ যেন পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা বিবেচনায় নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে ধাবিত হন। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ উভয় পক্ষেরই সর্বোচ্চ সংযম প্রত্যাশা করে।