ফিলিস্তিন যেন সভ্যতার এক গোলকধাঁধা। গাজা তার কেন্দ্রবিন্দু। এ সভ্যতায় সব আছেÑ জাতিসংঘ আছে, দাম্ভিক শাসক আছে, যুদ্ধ আছে, বৈঠক আছে, আশ্বাস আছে; তবে নেই শুধু ইনসাফ। এ জন্যই হয়তো যুদ্ধবিরতির দু’সপ্তাহ পার হলেও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মিসর সংলগ্ন গাজার সীমান্তপথ রাফাহ ক্রসিং খুলে দেয়নি ইসরাইল। পুরো বিশ্বের সঙ্গে অঞ্চলটির একমাত্র সংযোগ খুলে দিতে টালবাহানা করছে দখলদার শক্তি। চুক্তি অনুযায়ী রাফাহ ক্রসিং খুলে দিয়ে গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য আরো ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক এ আহ্বান জানান। তিনি জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির পর কোনোদিনই ন্যূনতম চাহিদার ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারে নি। যেসব ট্রাক প্রবেশ করেছে, তারও বেশির ভাগ বাণিজ্য পণ্য পরিবহনকারী। গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য আরো বেশি ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দিতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও সেখানকার খাদ্য সংকটের তেমন কোনো উন্নতি হয় নি। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রধান তেদরস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। গ্যাব্রিয়েসাস বলেন, ‘পরিস্থিতি আগের মতোই বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। কেননা, প্রবেশ করা ত্রাণের পরিমাণ যথেষ্ট নয়।’ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে উগ্র ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা বাধা দিচ্ছে। তারা ত্রাণবাহী ট্রাক চলাচলের পথ অবরোধের মাধ্যমে গাজায় তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় সামরিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজজুম জানান, থেমে থেমে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলীরা। এছাড়া বিভিন্ন আবাসিক ভবন ধ্বংস ও চাষের জমি নষ্ট করছে তারা। এদিকে ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গাজায় সন্ত্রাসী স্থাপনা ধ্বংস করছে তারা। শুক্রবার গাজায় হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম এক বিবৃতিতে বলেন, গাজায় শাসনের বিষয়ে ফিলিস্তিনী জাতীয় ঐকমত্যের কাছে তারা দায়বদ্ধ। উপত্যকার শাসনের বিষয়ে ফিলিস্তিনী সব পক্ষের সঙ্গে তারা আলোচনা করবেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘খোলা মনে আমরা ফিলিস্তিনী জাতীয় সংলাপে প্রবেশ করছি এবং সব পক্ষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন জাতীয় ঐকমত্য তথা ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের ওপর জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার সময়।’ এর আগে বৃহস্পতিবার আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাজেম কাসেম বলেন, ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ ও অন্যদলগুলোর সঙ্গে খোলা মনে জাতীয় সংলাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সব পক্ষকে জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে আলোচনায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। উপলব্ধি করা যায়, গাজা পরিস্থিতি এখনো তেমন সুখকর নয়। ত্রাণ সরবরাহে রয়েছে সংকট, রাফাহ ক্রসিং এখনো খুলে দেয়নি ইসরাইল। এছাড়া প্রক্সিযুদ্ধের ষড়যন্ত্র চলছে। ফিলিস্তিনীদের জাতীয় সংলাপ যেন সফল হয়।