চারদিন চলার পর পাক-ভারত যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ছিল খুবই খারাপ ইঙ্গিত। এ থেকে বড় বিপর্যয় সৃষ্টির আভাস ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে উভয় পক্ষ সাড়া দিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে। তবে শেষ হয়েও যেন শেষ হয়নি।
ভারতীয় পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর, সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরও ১০ মে রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোলাবর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পাল্টা জবাব দেয় ভারতও। ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তবে ১১ মে সকাল থেকে ভারত-পাক সীমান্তবর্তী এলাকার ছবি পাল্টেছে। আরো বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরে ফের জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই নিরাপত্তাবাহিনীর। চলছে তল্লাশি অভিযান। তল্লাশি অভিযান শুরু হতেই নিরাপত্তাবাহিনীকে নিশানা করে গুলি চালায় জঙ্গিরা। পাল্টা জবাব দেয় নিরাপত্তাবাহিনীও। সকালে কাশ্মীর জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও গুলির লড়াই চলছে। পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনী তাদের কাজ করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ৪৮ ঘণ্টায় জম্মু ও কাশ্মীরে এটি দ্বিতীয় ‘এনকাউন্টার’ বা গুলির লড়াইয়ের ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে জম্মু ও কাশ্মীরের সোপিয়ানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল তিনজনের। প্রথমে জম্মু ও কাশ্মীরের কুলগাঁওয়ে ওই অভিযান শুরু হয়েছিল, যা পরে সোপিয়ানের দিকে সরে আসে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পত্রপত্রিকাতে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিরতি লংঘনের খবর ছাপা হয়েছে।
তবে আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গত ১২ মে প্রথম সেনা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দু’দেশ আর একটিও গুলি না চালানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত হয়েছে, একে অপরের বিরুদ্ধে কেউ আক্রমণাত্মক বা শত্রুতামূলক পদক্ষেপ নেবে না। সোমবার সন্ধ্যা ৫টায় ভারত-পাকিস্তানের ডিরেক্টর অফ মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও)দের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বৈঠকটি দুপুর ১২টায় হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে বৈঠক না হওয়ায় সংশয় তৈরি হয়েছিল তবে শেষমেশ সন্ধ্যায় বৈঠকটি হয়। দিল্লির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সীমান্ত এবং সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সেনা কমানোর বিষয় নিয়েও ভারতের ডিজিএমও রাজীব ঘাই এবং পাকিস্তানের ডিজিএমও কাশিফ আবদুল্লার মধ্যে কথা হয়েছে।
এ ছাড়া দু’দেশের ডিজিএমওদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে একটিও গুলি না চালানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সে সঙ্গে কোনও পক্ষই যেন আক্রমণাত্মক পথে না হাঁটে-সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত এবং সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সেনা কমানো নিশ্চিত করার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও উভয়পক্ষ একমত হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন জানিয়েছে, প্রায় ৪৫ মিনিট স্থায়ী হয় এ বৈঠক। তবে বৈঠক শেষে এ সম্পর্কে কোনো দেশই বিবৃতি দেয়নি। ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু’দেশের সীমান্তরেখার ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও হেলিকপ্টার ও ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও যুদ্ধবিমান প্রবেশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আপাতত জম্মু-কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তানের অন্যান্য সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এবং পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রেঞ্জার্স। এ ছাড়া সীমান্তে সেনাবাহিনীও থাকবে, তবে সংঘাত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে তারা সামনে আসবে না।
৭ মে যুদ্ধ শুরু হয় ভারত কর্তৃক পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর মাধ্যমে। ভারত বলেছে যে এ অভিযানটি ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরে জঙ্গীদের দ্বারা পরিচালিত পেহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়া ছিল, যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল। ১০ মে পাকিস্তান অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস নামে একটি প্রতিশোধমূলক অভিযান শুরু। এ সংঘর্ষ দুটি দেশের মধ্যে প্রথম ড্রোন যুদ্ধের সূচনা করে। যাহোক সে পরিস্থিতির অবসান হয়েছে, উভয় পক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে।
আমরা মনে করি পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশের মধ্যকার এই যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া উচিত। উপমহাদেশ বিশ্বের ঘনবসতি এলাকা। বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলো যুদ্ধের বারুদের ধোঁয়া থেকে মুক্ত থাকার কথা নয়। তাই আমরা বলব দুটি দেশই এই যুদ্ধ বা সংঘাত আর বিস্তার না ঘটাক। দেশে দেশে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হোক। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হোক। অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হোক।