মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে পাল্টা শুল্কারোপের ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলো চীন এবং ভারতের মতো দেশ থেকে তাদের ইম্পোর্ট অর্ডার সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ধিত পরিমাণে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি চামড়া এবং চামড়া বহির্ভুত জুতা রপ্তানি চমৎকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২০২৬) প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতা রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে চামড়াবিহীন জুতা রাপ্তানি বেড়েছে ২২২ শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ মোট ১০ কোটি ১২ লাখ মার্কিন ডলারের জুতা রপ্তানি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। চলতি বছর একই সময়ে বাংলাদেশ মোট ১৩ কোটি ৩৩ রাখ মার্কিন ডলারের জুতা রপ্তানি করে। আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ মোট ৯ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়ার জুতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছিল। এবছর একই সময়ে মোট ১১ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি করা হয়। চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির পরিমাণ একই সময়ে ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার থেকে ১ কোটি ৭৪ লাখ মার্কিন ডলারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

বাংলাদেশর রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হচ্ছে সীমিত সংখ্যক পণ্য এবং সামান্য কয়েকটি গন্তব্যের ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরতা। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের মতো আসে তৈরি পোশাক ও তৎসংশ্লিষ্ট পণ্য রপ্তানি থেকে। অথচ তৈরি পোশাকের জন্য কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে চলে যায় রপ্তানি আয়ের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের মূল্য সংযোজনের হার ৬০ থেকে ৬৪ শতাংশের মতো। অন্যদিকে চামড়াজাত পণ্য, চা, পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় তার প্রায় পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে। এক সময় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকা তৈরি করতে অনিবার্যভাবে পাট, চা, চামড়ার নাম চলে আসতো। কিন্তু এখন এ তিনটি পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। তার স্থান দখল করেছে তৈরি পোশাক। আমরা যদি রপ্তানি বাণিজ্যের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে চাই তাহলে স্থানীয় কাঁচামালনির্ভর পণ্য বেশি বেশি করে রপ্তানি তালিকায় স্থান দিতে হবে। এ সঙ্গে নতুন নতুন রপ্তানি গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য কার্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশের মতো এ দু’টি গন্তব্য থেকে অর্জিত হয়। এটা কোনভাবেই ভালো লক্ষণ নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। এর কারণ হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত জিএসপি সুবিধা প্রদান করে থাকে। আগামী বছর জাতিসঙ্ঘের রেটিংয়ে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরো দিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা প্রদান করবে। তারপর বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা হারাবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হবে। বাংলাদেশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।