কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিনিধি দলকে লক্ষ্য করে মঙ্গলবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। কাতারে দীর্ঘ দিন ধরে হামাস ইসরাইল শান্তি আলোচনা চলছিল। সেখানে কাতার হচ্ছে মধ্যস্থতাকারী একটি দেশ। ইসরাইল সেখানে হামলা চালিয়ে চরম ঔদ্ধতের পরিচয় দিয়েছে। আমরা মনে করি দোহায় অবস্থানরত হামাস প্রতিনিধি দলের উপর ইসরাইল যে হামলা করেছে, সেটি অপরাধমূলক বিশ্বাসখাতকতাও বিপজ্জনক কাজ। যার নিন্দার ভাষা আমাদের জানা নেই। এটা যুদ্ধের কোন রীতি তো নয়ই শান্তি আলোচনাকালে অশান্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি করাও কোন শুভ বুদ্ধির কাজ নয়। ইসরাইল জন্ম থেকেই এসব ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করে যাচ্ছে, যার একটি সমাপ্তি হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের নীতিমালারও পরিপন্থী।

কাতারে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের নীতিমালারও পরিপন্থী।’ গত বুধবার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ বেআইনি ও উস্কানিমূলক হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ কাতারের সরকার ও জনগণের সাথে দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। ঢাকা বলেছে, ‘এ ঘটনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক শান্তি ও প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি ইসরাইলের অব্যাহত অবজ্ঞার আরেকটি ইঙ্গিত। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিনিধি দলকে লক্ষ্য করে হামলার পর থেকে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একের পর এক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, কাতারে ইসরাইলের এ হামলা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার চরম লঙ্ঘন। তিনি আরো বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে এবং ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে কাতার সর্বোচ্চ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। একইসাথে তারা গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে সকল পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরাইল কাতারের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে যে হামলা চালিয়েছে, তার স্পষ্টভাষায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ প্রধান। তিনি বলেছেন যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এভাবে হামলা করা তাদের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরো বলেন, কাতার একটি মধ্যস্থতাকারী পক্ষ। তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাদের উপর সীমালঙ্ঘন করা ইতিবাচকভাবে নেয়া যায় না। এ সময় তিনি তাগিদ দেন যে, এহেন মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে একই কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে। জাতিসঙ্ঘ মুখপাত্র বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি খুবই অস্থিতিশীল। এতে উত্তেজনা বৃদ্ধির বাস্তব কিছু ঝুঁকি রয়েছে। সেজন্য এভাবে মধ্যস্থতাকারী কোনো পক্ষের উপর হামলা করা গাজায় যুদ্ধ বন্ধের অগ্রগতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়।

কাতারে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরাইলের এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও কাতারের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর লঙ্ঘন। ইইউ’র এক মুখপাত্র বলেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি আরো বলেন, মধ্যস্থতাকারী একটি পক্ষের উপর হামলা করা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে। তিনি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেও কূটনৈতিক তৎপরতা ও সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। কাতারে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিব এরদোগান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।

আমরা মনে করি ইসরাইল এ হামলার মধ্য দিয়ে কাতারের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করেছে। এর থেকে এই কথা বুঝা যায় যে নেতানিয়াহুর এ বেপরোয়া সরকার সঙ্ঘাতকে আরো গভীরে টেনে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। যারা সন্ত্রাসবাদকে দেশের রাজনৈতিক পরিসরে প্রতিষ্ঠা করে, তারা কখনোই সফল হতে পারে না। আমরা সাধ্যের সবটুকু নিয়ে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও কৌশলগত অংশীদার কাতারের ভাইদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশ্ব শক্তির কাছে আহ্বান জানাই।