পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি খবরে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। তত্ত্বভিজ্ঞমহল বিষয়টিকে শুধু বিষয়টিকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন নয় বরং নিরাপত্তার জন্য হুমকী মনে করছেন। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রী বাজারে মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে আরাকান আর্মির সদস্যরা বাহিনীর পোশাক পরে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন একজন বিএনপি নেতাও। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর পলাতক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈ থুইসহ আরও কয়েকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এটি কোনো ছোটখাটো বিষয় বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এসে শাস্তিরও দাবি উঠেছে আত্মসচেতন মহল থেকে।

আমরাও বলতে চাই, এটা খুবই স্পর্শকাতর একটি ঘটনা। জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারেও যা উদ্বেগজনক। জানা গেছে, বান্দরবানের থানচিতে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) উৎসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অপরদিকে দেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির সাংগ্রাই উৎসবে অংশ নেওয়ার ছবি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টনক নড়ে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে থানচিতে ২২টি ইঞ্জিন বোটে করে সাঙ্গু নদীপথে আরাকান আর্মি এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে বিজিবির সূত্রে বলা হয়েছে, সাংগ্রাই উৎসবে আরাকান আর্মির কোনো সশস্ত্র সদস্য ছিল না। যারা ছিলেন তারা সহযোগী বা সমর্থক। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে কোনো আরাকান আর্মির সদস্য নেই বলে জানিয়েছেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।

এদিকে আরাকান সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের বাংলাদেশে এসে সাংগ্রাই উৎসব পালনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এসব ভিডিওর সবকিছু সত্য নয়, আবার সবটাই মিথ্যাও নয়। ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আরাকান আর্মি ফাইট করতেছে অনেকদিন যাবৎ। এদের অনেকে এপারে বিয়ে করে ফেলেছে এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু যে হারে ভিডিওতে আসছে, বিষয়টা তা নয়। টিকটক ভিডিও অনেকভাবে করা যায়। কিন্তু সবটা যে সত্য তা না। আবার সবটা যে মিথ্যা তাও না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে কথা বলেছেন তাতেও বিষয়টা উদ্বেগজনকই বলে মনে হচ্ছে। কারণ তিনি কিন্তু অস্বীকার যেমন করেননি স্বীকারও করেননি। আমরা মনে করি বিষয়টির প্রতি আরো গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া দরকার। কয়েক মাস আগে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়িতে ল্যান্ডমাইন বা স্থল মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন বাংলাদেশি আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সামরিক জান্তা বাহিনীর টানা যুদ্ধের পর সীমান্তবর্তী ওই এলাকা বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে এসেছে বলে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরেও বলা হয়েছে। এরই মধ্যে স্থল মাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হওয়ার পর নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়।

সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির তৎপরতা বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের জন্য হুমকির কারণ বৈকি। টেকনাফের বহু জেলে মিয়ানমার বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছেন, পরে ফিরেও এসেছেন। কয়েকবার টেকনাফের সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিও বিরাজ করেছে। এসব কথা বিবেচনায় রেখে আরাকান আর্মির দেশের ভেতরে এসে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া যথেষ্ট উদ্বেগের। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে বিষয়টি সযত্নে যেন দেখা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোন ঘাটতি থাকা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। এক্ষেত্রে অবহেলা ও উদাসীনতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকী হয়ে দেখা দিতে পারে।