সম্পাদকীয়
সমাজ চিন্তকদের ভাবতে হবে নতুন করে
ধর্ষণ মানব মর্যাদাকে অপমাণিত করে। নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর এ কাজটি করেন ধর্ষক। ধর্ষক তো মানব পরিচয় দিয়েই বসবাস করেন মানবসমাজে। প্রশ্ন জাগে, ধর্ষক কি মানবসমাজে বসবাসের উপযোগী? তিনি কি মানুষ?
Printed Edition
ধর্ষণ মানব মর্যাদাকে অপমাণিত করে। নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর এ কাজটি করেন ধর্ষক। ধর্ষক তো মানব পরিচয় দিয়েই বসবাস করেন মানবসমাজে। প্রশ্ন জাগে, ধর্ষক কি মানবসমাজে বসবাসের উপযোগী? তিনি কি মানুষ? অথচ বর্তমান সভ্যতায় ধর্ষক মানবসমাজে শুধু বসবাসই করেন না, মাথা উঁচু করেই বসবাস করে থাকেন। আর সরকারী ঘরানার ধর্ষক হলে তো ধর্ষণের সেঞ্চুরীও পালন করে থাকেন ঘটা করে। এমন অস্বাভাবিক অনাচার সমাজে কী করে হয়? তাহলে আমাদের সমাজ কি মানুষের সমাজ নয়? নাকি দাম্ভিক শাসক ও তাদের দোসররা সমাজকে মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তুলছেন? ধর্ষক তো নিকৃষ্ট অপরাধী, তার তো শাস্তি পাওয়া উচিত, কারাগারই তো তার ঠিকানা হওয়া উচিত। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী শাসনে তো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন হয় না। ফলে দলীয় ক্যাডাররা যা ইচ্ছে তাই করে চলে, এমন কী ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট কাজেও তারা কুণ্ঠিত নয়। ধর্ষণের অবশ্য নানা রূপ আছে, নানা মহল আছে। সাধারণ পর্যায়েও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে। এখানে রিপুর তাড়নায় নৈতিক অধপতন লক্ষ্য করা যায়।
সম্প্রতি কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে বাংলাদেশে। এরমধ্যে মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হচ্ছে। একই সময় বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়ও ধর্ষণের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। প্রসঙ্গত ভারতের ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়। ৯ মার্চ রয়টার্স পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের কাছে দুই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে স্থানীয় তিন অপরাধী। গত শনিবার স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের সঙ্গে থাকা এক পুরুষ সঙ্গীকে হত্যা করে। অপরাধীরা ধর্ষণ এবং হত্যার মত কাজ একসাথেই করলো। এতে তাদের বেপরোয়া মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে। একটি সমাজে মানুষ কখন বেপরোয়া হয়? যখন আইনের শাসন থাকে না এবং থাকে না নৈতিক মূল্যবোধ। দু’টি বিষয়ই সমাজ অবক্ষয়ের উদাহরণ। এমন উদাহরণ এখন পৃথিবীর দেশে দেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এত উন্নয়নের পরও পৃথিবীর এ কেমন হাল হয়েছে?
পৃথিবী যেন এখন এক ক্রান্তিকালে অবস্থান করছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও সম্পদ আহরণে মানুষ এখন অনেক এগিয়ে গেছে, কিন্তু এর বিনিময়ে কী হারিয়েছে সভ্যতা? মানুষ তো মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হয়নি। ভূরাজনীতি ও আগ্রাসী মনোভাব বিশ্ব নেতাদের মারণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় উৎসাহিত করেছে। যুদ্ধ ও আগ্রাসনের যে বাতাবরণ তা মানুষকে ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। হত্যা, ধর্ষণ এখন যেন কোনো বিষয়ই নয়। এর প্রভাব পড়েছে দুর্বল দেশগুলোতেও। সমাজ চিন্তকদের এখন নতুন করে ভাবতে হবে। সভ্যতার শাসকদের কাছ থেকে এখন মানুষের নেওয়ার কিছু নেই। মানুষকে জাগতে হবে স্বকীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের আলোকেই। ধর্ষণসহ যাবতীয় অপরাধ নির্মূলে স্বদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আইনের শাসন, আর সাথে থাকতে হবে নৈতিক মূল্যবোধ। মহান স্রষ্টা তো আমাদের এ পথেই চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সে পথে চলছি কি?