এ কোন সমাজে আমাদের বসবাস? পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্তব্ধ দেশবাসী। ১১ জুলাই ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় ডিএমপি। গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনিরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এদের রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যার শিকার সোহাগের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্বশত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নৃশংস এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দেশজুড়ে প্রশ্ন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ কোন অন্ধকারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ, কারা এর খলনায়ক?

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্যসংগঠক সারজিস আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সারজিস লেখেন, ‘সবাই খারাপ কিন্তু উনি ভালো, বাংলাদেশে এমন নাটক আর চলবে না। আপনার দলের নেতাকর্মী নামক কতিপয় নরপিশাচকে সামলান, জনাব তারেক রহমান। যে নিয়মে আওয়ামী লীগের করা হত্যার দায় খুনি হাসিনার ওপর বর্তায়, সে একই নিয়মে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের করা খুনের দায় আপনার ওপরেও বর্তাবে।’ সারজিস আরো লেখেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে চাঁদা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে উলঙ্গ করে, পাথর মেরে হত্যা করে তার লাশ ঘিরে চললো যুবদলের কর্মীদের বুনো উল্লাস। এ দৃশ্য আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের বর্বতার কথা স্মরণ করায়। এজন্য বাংলাদেশের মানুষ জুলাই বিপ্লব করেনি। আগের দিন আর নেই, জনাব। এ প্রজন্ম ছাড় দিতে পারে, তবে ছেড়ে দেবে না।’ নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, যারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তারা ক্ষমতায় গেলে দেশের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, জাতি সেটা উপলব্ধি করছে। যে দলের এক নেতা আরেক নেতার কাছে নিরাপদ নয়, এক কর্মী আরেক কর্মীর কাছে নিরাপদ নয়, সে দলের আচরণে দেশ ও জাতি কিভাবে নিরাপদ থাকবে?

প্রশ্নের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের ছাত্র-জনতা শুধু বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দল নয়, বরং পুরো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থারই উৎখাত চেয়েছে। এক দলের পরিবর্তে অন্য কোনো দল দেশের জমিন ফ্যাসিবাদের চাষবাস করে যাবে-এটা দেশের ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। প্রয়োজনে ছাত্র-জনতা আবার নামবে রাজপথে। আশংকার কারণেই তো সচেতন রাজনীতিবিদরা বলছেন, এক সরকারের পরিবর্তে অন্য সরকার প্রতিষ্ঠা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল না। এ জন্যই তো বলা হচ্ছে, বিচার ও সংস্কার বিহীন নির্বাচন ছাত্র-জনতার কাম্য নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন নির্বাচন হতে হবে, যার মাধ্যমে উৎখাত হবে পুরো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা। যেখানে পাথর মেরে মানুষ হত্যার কথা কল্পনাও করা যাবে না।