বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানী ঢাকায় টানা বৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, দেখা দেয় তীব্র যানজট। যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে অনেক গাড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। রাজধানীতে একটু বৃষ্টি হলেই এ সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, রাজধানীর বিজয় সরণি মোড় থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ পর্যন্ত সড়কে পানি জমে যান চলাচল বিঘ্ন হয়েছে। রাত ১১টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি, সৈনিক ক্লাব মোড় থেকে কাকলী হয়ে নৌ সদর দপ্তরের সামনে পর্যন্ত রাস্তা হাঁটুসমান পানিতে ডুবে যায়। সেখানে বেশ কিছু যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ায় সেগুলো রাস্তায় আটকে থাকে। রাত ১২টার দিকে মিরপুরের কালশী এলাকায়ও একই চিত্র দেখা যায়। কালশী উড়ালসড়ক থেকে পূরবী পর্যন্ত সড়কে জমে ছিল হাঁটুসমান পানি। সাংবাদিক আবাসিক এলাকার প্রধান ফটকের সামনের রাস্তার চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। পানি ছিল প্রায় কোমর পর্যন্ত। ওই অংশের সড়কের দু’পাশে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি যানবাহন বিকল হয়ে রাস্তায় আটকে থাকতে দেখা যায়।
প্রতিবছর বর্ষার সময় আমরা দেখি ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরীতে জলাবদ্ধতা ও নগর বন্যা দেখা দেয়। আমরা ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালে দেখেছিলাম বড় বন্যা। তবে এখন সামান্য বৃষ্টিপাতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে উন্নয়নের নামে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকঢোল পিটালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ তার প্রমাণ।
ঢাকার চারদিকের নদীগুলো উজানের বৃষ্টির পানি বহন করায় আগে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে এখনো হচ্ছে। নদীর পানির সমতল যখন বাঁধের ভেতরের পানি সমতলের চেয়ে বেশি থাকে, তখন রেগুলেটর ও স্লুইস গেট বন্ধ করে পাম্প চালু করে বৃষ্টির পানি বের করতে হয়। এ রকম সময় জলাবদ্ধতা ও নগর বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, অতীতে যেমনটা দেখেছি। আমরা মনে করি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারের সাফল্য দেখতে চাই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুটি সিটি কর্পোরেশন সমন্বিতভাবে কাজ করলে এটা করা সম্ভব।
জলাবদ্ধতার প্রধান কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নগরীতে যতগুলো প্রাকৃতিক খাল আছে তার অনেকাংশ দখল ও ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না। এ কারণে পানি জমে। জলাশয় ও ডোবা বৃষ্টির পানির আধার হিসেবে কাজ করে থাকে। অবৈধভাবে অনেক জলাশয় ভরে সেখানে ঘরবাড়ি, আবাসন প্রকল্প, অফিস ভবন অথবা শপিংমল করা হয়েছে। ফলে পানি জমে থাকে। ঢাকা অতিদ্রুত নগরায়নের ফলে বৃষ্টির পানির সব অংশই নর্দমা ও প্রাকৃতিক খালের মধ্যে যাচ্ছে এবং মাটির নিচে তেমন পানির প্রবাহ যেতে পারছে না। এছাড়া আরো অনেকগুলো কারণ বিশেষজ্ঞরা দেখিয়েছেন। আমরা মনে করি বর্তমান সরকার এ কারণগুলো বিশ্লেষণ করে একটি সমাধানের পথে হাঁটবে।
জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান ২০১৫-এ মোট ৪৭টি খালের কথা উল্লেখ আছে। এ খালগুলো উদ্ধার করতে হবে এবং এর সীমানা নির্ধারণ করা দরকার। জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ শহর ও রাজধানী অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে বন্যামুক্ত করার কথা বলা হয়েছে এবং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার সুপারিশ করা হয়েছে। শুধু রাজধানী নয় বড় বড় শহরগুলোতেও বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগ সৃষ্টির খবর পত্রিকায় দেখা যায়। এ ধরনের জলাবদ্ধতায় বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও নিম্নআয়ের পথচারীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন। স্কুল কলেজ অফিস আদালতে সময়মতো পৌঁছানোর তাড়ায় বিড়ম্বনার মাত্রা যোগ হয় কয়েক গুণ। স্বাভাবিক দিনে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও বৃষ্টির দিনে গন্তব্যে পৌঁছাতে রিকশা কিংবা অন্য যানবাহনের সাহায্য নিতে হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর রাজধানীর সড়কে কমে যায় যানবাহন চলাচল। এ সুযোগে রিকশাভাড়া হয়ে যায় দ্বিগুণ। আমরা রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশাবাদী। আমরা চাইব এ দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করার জন্য সম্ভব সব কিছু করা হোক।