মহিমান্বিত মাস রমযানে এতেকাফ এক অনন্য ইবাদত। রমযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের সর্বোত্তম মাধ্যম এতেকাফ। এতেকাফের লক্ষ্য আছে, বিধান আছে এবং আছে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন চেতনাও। এতেকাফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো জিনিসকে আঁকড়ে ধরা এবং এর সাথে নিজ সত্ত্বা ও আত্মাকে নিবিষ্ট রাখা। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, প্রভু আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে মসজিদে বান্দার বসবাস ও অবস্থান। অন্য সময়ও এতেকাফ জায়েজ, তবে রমযান মাসের এতেকাফ উত্তম। এতেকাফ এমন এক বৈধ নির্জনতা যেখানে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত যিকির ও আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পবিত্র করে এবং ব্যক্তিসত্ত্বাকে একান্তভাবে আল্লাহর প্রকৃত বান্দায় রূপান্তরিত করে। এতেকাফের সময় বান্দা মসজিদের পবিত্র অঙ্গনে নিজেকে ব্যস্ত রাখে নামায, রোজা, কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামী জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায়। নিজেকে প্রকৃত বান্দা হিসেবে পরিগঠনের লক্ষ্যে মানুষ দুনিয়ার সকল কাজ ও ব্যস্ততা থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দূরে থাকে এতেকাফের সময়। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথে দুনিয়াবী চিন্তা ও কাজ যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেটাও এতেকাফের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনা। তবে এতেকাফ কিন্তু বৈরাগ্যবাদ নয়, বরং নিজেকে প্রকৃত বান্দা হিসেবে তৈরি করে দুনিয়ার জীবনে উন্নত নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অনন্য মাধ্যম।

আমরা জানি, মানুষ আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি এবং এ সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু এ পথে প্রধান বাধা শয়তান এবং মানুষের অন্তর্গত প্রবৃত্তির তাড়না। এ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় রমযানের শেষ দশকের এতেকাফ আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক যত গভীর হবে জীবন হবে ততই সফল। এতেকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব বলেছেন, ‘এতেকাফের উদ্দেশ্য হলো, সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সাথে পরিচয় যত গভীর হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ততো নিবিড় হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে। এতেকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বান্দা সচেতন থাকলে এবং অন্তরের গভীরে এতেকাফের চেতনাকে লালনে সমর্থ হলে সীমিত সময়ের এ এতেকাফ বান্দার বাকী জীবনে গভীর প্রভাব ফেরতে পারে। স্রষ্টার সাথে মানুষের যখন পরিচয় ঘটবে এবং সম্পর্ক গভীর হবে, তখন মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টিকেও ভালবাসতে সক্ষম হবে। বর্তমান সময়ে আমরা পৃথিবীতে, সমাজে, পরিবারে যে অন্যায় অবিচার,জুলুম-নিপীড়ন,শঠতা, নিষ্ঠুরতা লক্ষ্য করছি তা দূর করার ক্ষেত্রে এতেকাফসমৃদ্ধ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

আমরা জানি, এতেকাফ একটি সুন্নাত ইবাদত, কিন্তু এতেকাফের মান্নত করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়। পবিত্র কুরআন মজিদে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার ঘরকে তাওয়াফ ও এতেকাফকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। রাসূল (স:) রমযান মাসে ১০ দিন এতেকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তিকালের বছর তিনি ২০ দিন এতেকাফ করেন। তাঁর এ উদাহরণ মুসলমানদের এতেকাফে অনুপ্রাণিত করে থাকে। তবে শুদ্ধভাবে এতেকাফ করা জন্য কিছু জ্ঞান আমাদের অর্জন করতে হবে। যেমন এতেকাফের শর্ত কি, এতেকাফের মোস্তাহাব বিষয়, এতেকাফে যা জায়েজ। এতেকাফের মাকরূহ বিষয় এবং নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কেও আমাদের জেনে নিতে হবে। কারণ, ইবাদত সঠিক ও শুদ্ধভাবে সম্পন্ন হলেই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হতে পারে। আর এজন্য জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই।