পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে দেশের অর্থনীতি হয়ে পড়ে নাজুক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাচার হওয়া সে অর্থ উদ্ধারে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গা। আর এ বৈঠকে অর্থনৈতিক সংস্কারসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

দৈনিক সংগ্রামে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গা। বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অগ্রাধিকারমূলক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল-আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ধারা, রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতের কাঠামোগত সংস্কার, চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়ন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ এবং এশিয়ার তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। পাশাপাশি কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি হওয়া জাতীয় সম্পদ পুনরুদ্ধারের জরুরি প্রয়োজনীয়তাও বৈঠকে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়। খবরে বলা হয়, অজয় বঙ্গা সাক্ষাৎকালে প্রফেসর ইউনূসের গত ১৪ মাসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংকের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন এবং বলেন, ‘বলিষ্ঠ সংস্কার ছাড়া টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।’ জবাবে প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাংকের অবিচল সহযোগিতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতির ইতিহাসের এক সংকটময় সময়ে এ সহায়তা বাংলাদেশকে সঠিক পথে রাখছে। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংককে চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণ ও পুনর্গঠনে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরই এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। আসুন আমরা একসঙ্গে এটির উন্নয়ন করি।’ প্রফেসর ইউনূস উল্লেখ করেন, নেপাল ও ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যও একটি আধুনিকায়িত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে লাখো মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। বৈঠকে অজয় বঙ্গা বাংলাদেশের ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে কাঠামোগত সংস্কারের অপরিহার্যতা তুলে ধরে বলেন, এসব সংস্কারই আগামী দিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই ও শক্তিশালী ভিত্তি দেবে।

আমরা মনে করি প্রধান উপদেষ্টা যথাযথই বাংলাদেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি হওয়া জাতীয় সম্পদ পুনরুদ্ধারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন । আর বৈঠকে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বিশ্বব্যাংককে চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণ ও পুনর্গঠনে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা করার আহ্বান জানান। আমরা মনে করি বিষয়টি বিশ্বব্যাংক গুরুত্বসহ বিবেচনা করবে। চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিশ্বব্যাংক সহায়তা করলে তা ফলদায়ক হতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণ ও পুনর্গঠনে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে তাও তাৎপর্যবহ। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের অর্থনীতির একটি প্রধান চালিকা শক্তি। এর আধুনিকায়ন সময়ের দাবি। বিশ্বব্যাংক এ ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার এই বৈঠকের অগ্রগতি ধরে রাখা ও তা আরো অর্থবহ করার ওপর জোর দিতে চাই। আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার সেই বিষয়ে আন্তরিকতার প্রমাণ দেবেন।