প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশা প্রকাশ করেছেন, আসন্ন জাতিসঙ্ঘ সম্মেলন দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে একটি সুস্পষ্ট সমাধানের পথ তৈরি করবে। দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুজ অধ্যাপক ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎকালে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করে টম অ্যান্ড্রুজ ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নিউইয়র্কে ওই সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। আমরা বলতে চাই, লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অবস্থান কোন স্থায়ী সমাধান নয়। বরং আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে অনিষ্পন্ন রয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর পরেও বিভিন্ন সময়ে হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা চালালেও দেশটির জান্তা সরকারের টনক নড়ছে না।
আমরা দেখেছি অতীতে স্বৈরাচারী আমলে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে যতটা করার দরকার ছিল তা করা হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সে ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে এসে বিষয়টির উপর যথাযথ গুরুত্ব দেবেন বলে আমরা আশাবাদী। আশার কথা সরকার সে লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। এ সংকট নিরসনে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি সম্মেলনের প্রস্তুতি চলমান। এ সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুস্পষ্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সুস্পষ্ট পথ দেখাবে জাতিসঙ্ঘ সম্মেলন, আশা প্রধান উপদেষ্টার। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রুজকে পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ মৌলিক সেবাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সময় টম অ্যান্ড্রুজকে পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগেই জাতিসঙ্ঘ সদরদফতরে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি বিশ্ব কৃতজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি সঙ্কট সমাধানে বিভিন্ন পক্ষের সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন। অ্যান্ড্রুজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অব্যাহত প্রচেষ্টা দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান এনে দিতে পারে এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূমিকা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
আমরাও প্রধান উপদেষ্টা ও মি অ্যান্ডুজের মতো আশাবাদী হতে চাই। আমরা মনে করি জাতিসংঘের এ বিষয়ে অনেক কিছু করার রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একটি পথ রচনা এখন সময়ের দাবি বলে আমরা মনে করি।