গত শুক্রবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিঘর গ্রাম থেকে এক দম্পতি ও তাঁদের দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চারটি লাশের পাশে পাওয়া একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’। চিরকুটের ভাষা খুবই বেদনাদায়ক, চারজনের মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। পরিবার প্রধান মিনারুল ইসলাম কৃষিকাজ করতেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ধারণা, অভাবের কারণে মিনারুল তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ লাশগুলো নিয়ে যায়।

চিরকুট থেকে ঋণের দায় ও খাওয়ার অভাবের কথা জানা গেছে। আমাদের গ্রামবাংলার কৃষি শ্রমিকের জীবনে এটা কোনো নতুন চিত্র নয়। ঋণের দায় ও খাদ্যের অভাব নিয়ে অনেকেই বেঁচে আছেন। কিন্তু মিনারুল স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করতে গেলেন কেন? বিষয়টিকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। পরিবারের সদস্য, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিনারুল এক সময় জুয়া খেলতেন। পরে ছেড়ে দেন, কিন্তু ততদিনে জুয়ার কারণে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দেড় বছর আগে বাবা রুস্তম আলী ধানি জমি বিক্রি করে ঋণের একটা অংশ, দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপরও মিনারুলের দুই লাখ টাকা ঋণ ছিল। একজন কৃষি শ্রমিকের সাড়ে তিন লাখ টাকা ঋণের চিত্র থেকে উপলব্ধি করা যায়, জুয়ার নেশায় তিনি কতটা বুঁদ হয়ে পড়েছিলেন। জুয়ার বিষফল এতটাই মারাত্মক ছিল যে, ঋণের জন্য মিনারুলকে প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার ৭০০ টাকার বেশি কিস্তি প্ররিশোধ করতে হতো। কিন্তু এই কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না মিনারুল। বাবাকে আরো কিছু জমি বিক্রি করে ঋণের পুরো টাকা পরিশোধ করতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু বাবা আরো জমি বিক্রি করতে রাজি হননি। এ নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন মিনারুল। এমনকি ছেলে-মেয়েদেরও মিশতে দিতেন না মা-বাবার সাথে।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে উপলব্ধি করা যায়, মিনারুলের পরিবারের করুণ পরিণতির জন্য দারিদ্র্য নয়, বরং দায়ী জুয়ায় আসক্তি। এই আসক্তি তাকে সাড়ে তিন লাখ টাকার ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলেছিল। এ দায় পরিশোধ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রশ্ন জাগে, একজন কৃষি শ্রমিক এত বড় অংকের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়লো কেমন করে? জুয়ার হোতা ও সংগঠক কারা? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে কি তারা পড়েননি? যারা সমাজ নেতা, তারা কি এসব অপকর্ম শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেই গেছেন? নাকি জুয়ার কর্মকাণ্ডে তাদেরও কোনো হিস্যা আছে? এসব কিছুর তদন্ত প্রয়োজন। আর ঋণদাতাদেরও খোঁজ-খবর নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান হলে তো কৃষিশ্রমিকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা সম্পর্কে যাচাই করা তাদের দায়িত্ব ছিল। সব মিলিয়ে বলা যায়, পরিবারটির করুণ পরিণতির জন্য অনেকেরই দায় আছে। আর বড় দায় পরিবার প্রধানের, জুয়ার আসক্তি যাকে সীমালংঘনের দিকে তাড়িয়ে নিয়েছিল।