গাজা পরিস্থিতি পুরো সভ্যতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তবুও গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন থামছে না। একদিকে বোমা হামলা, অন্যদিকে অনাহার। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দিন কাটছে লাখো ফিলিস্তিনীর। অথচ যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় আমেরিকার জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে সমর্থন কমেছে। আমেরিকার গবেষণা সংস্থা গ্যালাপের করা নতুন এক জারিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। জরিপে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাত্র ৩২ শতাংশ আমেরিকান এই সামরিক অভিযান সমর্থন করছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় যা ১০ শতাংশ কম। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন এ জরিপে আরো বলা হয়েছে, এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবেও তীব্র বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন ও গাজাবাসীর প্রতি তাদের আচরণকে সমর্থন করছে। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মাত্র ৮ শতাংশ এ বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েছে। এমন চিত্র থেকে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ। এই জরিপে সামরিকভাবে বলা হয়েছে, ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা গাজায় ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপকে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এদিকে ম্যরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ক্রিটিক্যাল ইস্যুজ পোলের পরিচালক শিবলী তেলহামি বলেছেন, সর্বশেষ জরিপটিতে উঠে এসেছে ইসরাইলের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের বিষয়টি, যা গাজায় যুদ্ধের বাইরেও বিস্তৃত। এই অসন্তোষ বেশি দেখা যাচ্ছে তরুণ আমেরিকানদের মধ্যে। এসব তরুণদের বেশিরভাগই ডেমোক্রেট এবং স্বাধীন। আবার এদের মধ্যে রিপাবলিকান সমর্থক তরুণরাও রয়েছে। এসব তরুণের কাছে ধরা পড়েছে ইসরাইলী নৃশংসতা। যারা ইসরাইলের চরিত্রকে গাজার ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে মূল্যায়ন করছেন।

আমেরিকান জনমতে পরিবর্তনের পরও ইসরাইলের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা ইসরাইলকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে, পাশাপাশি জাতিসংঘ ইসরাইলকে রক্ষা করেছে কূটনৈতিকভাবেও। শুধু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, পূর্বসূরী জোবাইডেনও গাজায় ইসরাইলি আক্রমণের ঘোর সমর্থক ছিলেন। বিষয়টিকে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে এখন জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির ৮২ শতাংংশই গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনকে সমর্থন করছেন না। এছাড়া তরুণরাও অন্ধ ইসরাইল প্রীতি থেকে মুক্ত হচ্ছে। উপলব্ধি করা যায়, সত্য চিরদিন ঢাকা থাকে না। ফলে বিভ্রান্তির চাদর সরে যাবেই। বিভ্রান্তির কারণে শুধু যে ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, আমেরিকারও হচ্ছে সম্মানহানি। মার্কিন নেতৃত্বের প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা হ্রাস পাচ্ছে, দেশেও তাদের সমর্থন কমছে। এরপরেও কি ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধপরাধী নেতানিয়াহু সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে? এমনটি হলে তার মাশুলও কিন্তু দিতে হবে মার্কিন সরকারকেই।