গাজায় কার্যকর যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নতুন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দু’সপ্তাহে ইসরাইলের হাতে শতাধিক ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালিয়ে ৬৮ হাজার ৫১৯ জনকে হত্যা করেছে এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৮২ জন আহত হয়েছে। হামাসের অভিযোগ যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকেই ইসরাইল বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ হামলার নিন্দার ভাষা নেই।

গাজা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস একটি ২০ দফা ‘ব্যাপক শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করে, যেখানে গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন এবং অস্থায়ী প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের প্রস্তাব ছিল। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানো, ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনগুলোকে পুননির্মাণ, গাজা থেকে ইসরাইলী সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে এখনো তেমন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ব্যাপক হামলা চালিয়ে ১০৪ জনকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইল। নিহতদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু। এরপর গত বুধবার থেকে তারা যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে ইসরাইলী সেনাবাহিনী বলেছে, রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশনার পর সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরায় কার্যকর করেছে। বিবৃতিতে দখলদাররা বলেছে, তারা গাজার প্রায় ৩০ জায়গায় হামলা চালিয়েছে। এতে হামাসের অবকাঠামো ও যোদ্ধাদের লক্ষ্য করা হয়েছিল বলেও জানায় তারা।” তবে বাস্তবে হামলার শিকার হয়েছে আবাসিক ভবন, শরণার্থী শিবির এবং সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি। মধ্য গাজার একটি পরিবারে ১৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন শিশু, বাবা-মা এবং দাদা-দাদি।

এরআগে মঙ্গলবার রাতে গাজায় ‘তাৎক্ষণিক’ ও ‘শক্তিশালী’ হামলা চালানোর নির্দেশ দেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ওইদিন বিকালে রাফাতে এক ইসরাইলী সেনা নিহত হয়। তবে তার ওপর কে বা কারা হামলা চালিয়েছিল সেটি নিশ্চিত নয়। ওই সেনার মৃত্যুর পর ইসরাইল দাবি করে হামাস যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া মৃত বন্দীদের লাশ সময়মতো ফেরত না দিয়ে হামাস চুক্তি ভঙ্গ করেছে বলেও দাবি করে তারা। এরপরই রাতে গাজায় ব্যাপক হামলার নির্দেশ দেন নেতানিয়াহু। তার নির্দেশের কয়েক ঘণ্টা পর ইসরাইলী যুদ্ধবিমান গাজায় এসে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে। এতে এক পরিবারের ১৮ জনসহ প্রায় ১০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

আলজাজিরা জানিয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এদিকে হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড জানায়, তারা চুক্তি অনুযায়ী আরেকটি লাশ হস্তান্তর করতে প্রস্তুত ছিল, কিন্তু ইসরাইলী হামলার কারণে তা স্থগিত করা হয়। দেখা যাচ্ছে হামাস চুক্তি মেনে চললেও ইসরাইল তা মানছে না। তারা নতুন করে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণা দিলেও তাতে আস্থা রাখা যাচ্ছে না।

আমরা মনে করি ইসরাইলের এমন মানুষ খুনের খেলা বন্ধ করে সত্যিকারের যুদ্ধবিরতিতে ফিরে আসা উচিৎ। আর বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ বিশ্ব মোড়লদের দেখা উচিৎ। ইসরাইল কেন হত্যা অব্যাহত রেখেছে তা নির্ণয় করা তাাদের কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। গাজায় আর কোন হামলা বা মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না।