সেনাবাহিনীর অভিযানে সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ গ্রেফতার হয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ খুশি। অপরাধীদের পাকড়াও করায় আমরাও সেনাবাহিনীকে ও একই সাথে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এরপরও দৈনিক সংগ্রামে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি খবরে আমরা বিচলিত। এতে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের ওয়ারেন্ট জারি করা পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ গ্রেফতার হলেও এখনো অধরা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের অন্তত ডজনখানেক দাগি সন্ত্রাসী। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশন চললেও দুর্ধর্ষ অপরাধীরা অধরাই ছিল। এসব সন্ত্রাসী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। তবে আলোচিত দু’ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার হলেও আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করা দাগি অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এখনো অধরা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজধানীতে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই যৌথবাহিনীর ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশন চলছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে চলমান যৌথ অভিযানের মধ্যেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে না আসায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। সূত্রমতে কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নাম আসে আলোচিত কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর। তাদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয় এবং ধীর্ঘ গোয়েন্দা তৎপরতায় মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা তিন ঘন্টার অভিযানে অস্ত্র, গুলী ও অন্যান্যসরঞ্জামসহ দু’ শীর্ষসন্ত্রাসী ও তার দু’ সহযোগীকে আটক করে সেনাবাহিনী। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শীর্ষসন্ত্রাসী ও দাগি অপরাধীদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে এসে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখল, হামলাসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে বলে উক্ত খবরে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান শুরু হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীর কার্যক্রমে কোনো বাহিনী কী কাজ করছে সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা সরকারের সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয়। এসব নির্দেশনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা মনে করি শুধু নির্দেশনা নয়, তা বাস্তবায়নও জরুরী।

কারা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ৫ আগস্টের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায় সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন ও খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, খোরশেদ আলম ওরফে রাসু নামে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা। অন্যদিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পায় ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলাল, এস এম আরমান, শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, হাবিবুর রহমান তাজ, আকতার হোসেন ও সোহেল রানা চৌধুরী ওরফে ফ্রিডম সোহেল, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী ও শাহাজাদা সাজু। আমরা মনে করি তারা কিভাবে জামিন পেল তা খতিয়ে দেখা দরকার। জনগণের এই উদ্বেগ নিরসন করতে পারে। সেই সময় ফুরিয়ে যায়নি। সেনাবাহিনী তাদের অভিযান অব্যাহত রাখুক এটাই এখন সবার চাওয়া।