একজন শ্রমিকও দার্শনিক হতে পারেন, হতে পারেন সমাজ সংস্কারক। এ প্রসঙ্গে সেলিম মিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো অসঙ্গতি বা অনিয়ম নজরে পড়লেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন সেলিম মিয়া। নানা কৌশলে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেন এ যুবক। এর মধ্যে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যার প্রতিবাদ, ভোটচোরদের হেদায়েত কিংবা ধ্বংস কামনা, জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এবার মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়া চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছেন সেলিম মিয়া। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সন্তান সেলিম পড়াশোনা ও কাজের তাগিদে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন কুমিল্লায়। বর্তমানে তিনি নগরীর একটি মাদরাসায় অধ্যয়নের পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। বাহন হিসেবে নিজের সাইকেলের পেছনে একটি ক্যারেটে তিনি নির্মাণ সামগ্রী বহন করেন। সঙ্গে পেছনে তিনি একটি প্ল্যাকার্ড লাগিয়েছেন। দেখতে অনকেটা মোটর সাইকেলের পেছনে নম্বর প্লেটের মতো।
সেলিম মিয়ার প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে-, ‘ভিক্ষা লাগলে ভিক্ষা নে, চাঁদাবাজি ছেড়ে দে’। এমন বাক্য লেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের প্রায় সব প্রান্তে চাঁদাবাজি মহামারি আকার ধারণ করেছে। চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আমলারা। যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে চাঁদা দিতে হয়, কমিশন না দিয়ে কেউ উন্নয়ন কাজ করতে পারেন না, সন্ত্রাসীদের টাকা না দিলে রিকশাও চালানো যায় না। এ অরাজকতা রুখতে হবে। সেলিম বলেন, ‘আমি প্ল্যাকার্ডটি লাগিয়েছি মূলত চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ। আমাদের দেশে চাঁদাবাজি দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান তুলে ধরেছি। চাঁদাবাজি যেই করুক, সে যে দলের লোকই হোকÑ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। জনগণ সচেতন হলেই এ মহামারি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমি অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেব না, অন্যরাও যেন না দেয়। অন্যায়কারী আমার ছেলে হলেও তাকে আমি প্রশ্রয় দেব না।’
প্রতিবাদী সেলিম বলেন, ‘আমি প্রথমে যে স্লোগান সাইকেলে লাগিয়েছি, সেটা ছিল কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে। কারণ, তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা মুসলিম নয়। কাদিয়ানিরা আমাদের নবীজির ইসলামকে মানে না, আমি চাই তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হোক।’ জুলাই বিপ্লব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাঁদাবাজির প্রতিবাদের আগে সবশেষ যে পোস্টার আমি লাগিয়েছি, সেটা ছিল জুলাই আন্দোলনে ছাত্র হত্যার বিচারের দাবিতে। যতদিন প্রাণ আছে, দেশের মানুষের পক্ষে আমার এ প্রতিবাদ চলতে থাকবে। কখনো কারো ভয়ে আমি পিছপা হবো না। একজন শ্রমিকের দেশপ্রেম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেতনা-সাড়া জাগিয়েছে নগরজুড়ে। তার কাজের প্রশংসা করছে সুশিল সমাজও। অনেকেই বলছেন, আজ একা করলেও অনেকই তাঁর সাথে যোগ দেবেন অচিরেই। আমরা মনে করি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আপন অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করা সব নাগরিকের দায়িত্ব। তবে অগ্রপথিক হিসেবে আমরা সেলিম মিয়াকে সম্মান জানাই।