সম্পাদকীয়
গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা কাম্য নয়
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে কয়েকটি সেক্টরে থেমে থেমে অনেকটা নিয়মিতভাবেই অস্থিরতা, উত্তেজনা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো গার্মেন্টস তথা পোশাক শিল্প।
Printed Edition
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে কয়েকটি সেক্টরে থেমে থেমে অনেকটা নিয়মিতভাবেই অস্থিরতা, উত্তেজনা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো গার্মেন্টস তথা পোশাক শিল্প। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরেই যেহেতু অধিকাংশ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির অবস্থান, তাই এ দুটো জেলায় অস্থিরতা দৃশ্যমান ছিল। বিশেষ করে গাজীপুরের মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ প্রদর্শন ছিল নিয়মিত ঘটনা। এমনকি একবার টানা ৪৮ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে।
বিগত কয়েক বছরের ইতিহাস দেখে দেখা যায়, ঈদের আগে দেনা-পাওনা ও বোনাস বিতরণ নিয়ে গার্মেন্টস শিল্পে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়। বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালিক ঈদের আগে পাওনা শোধ করে না। আবার শিপমেন্টেও নানা ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়। এবার যেহেতু আগে থেকেই এ সেক্টরে অসন্তোষের কিছু আবহ তৈরি হয়ে আছে, তাই আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা তৈরির আশংকা একদম উড়িয়েও দেওয়া যায় না। তাই আগে থেকে প্রতিকার ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল।
আশার কথা হলো, ঈদের আগে গার্মেন্টস সেক্টর যাতে অশান্ত না হয় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। দৈনিক সংগ্রামে বুধবারে প্রকাশিত একটি সংবাদে দাবি করা হয় যে, প্রতিবছর বেতন বোনাস নিয়ে ঈদের আগে তৈরী পোশাক খাতে অসন্তোষ দেখা দেয়। এবার যাতে সেরকম কিছু না হয় সেজন্য আগেভাগে উদ্যোগ নিয়েছে নীট শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে ১৫ রমযানের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বস্ত্র খাতসহ অন্যান্য খাতের রফতানি ভর্তুকি বাবদ সাত হাজার কোটি টাকা ছাড় করার আবেদন করেছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। অর্থসচিবকে লেখা এক চিঠিতে অর্থছাড়ের আবেদন করেছেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা আছে।
গত মঙ্গলবার লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সামনেই আছে বেতন ও ঈদের বোনাসের বড় চাপ। কঠিন এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের বেতন, বোনাসসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে আবার শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তখন স্বার্থান্বেষীগোষ্ঠী পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার সুযোগ পাবে বলে মনে করছে বিকেএমইএ। এই বাস্তবতায় বিকেএমইএ ১৫ রমযানের মধ্যে রফতানি ভর্তুকির সাত হাজার কোটি টাকা ছাড় করার আবেদন করেছে।
আমরা আশা করবো, সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেবেন। পাশাপাশি, শুধুমাত্র মালিক পক্ষের কথা শুনেই একপক্ষীয় কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং শ্রমিকসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সাথে মতবিনিময় করে সবাইকে আস্থায় নিয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তারা সক্রিয় হবেন। গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম রফতানি আয় আনয়নকারী সেক্টর। এ কারণে এই সেক্টরকে দুর্বল করার জন্য এবং গার্মেন্টস শিল্পে আসা অর্ডারগুলো অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরিত করার জন্য দেশি-বিদেশি নানা মহল জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নিছক দলীয় স্বার্থ দেখার মানসিকতা পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে।
সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও বিশেষ করে মালিক ও শ্রমিক-জনতার এই বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন। কিছু প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি সবারই থাকতে পারে। কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ বা প্রতিক্রিয়া যেন আমরা না দেখাই যাতে করে দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। আমরা যেন দেশের মানুষের স্বার্থ দেখি। এতগুলো মানুষ ও তাদের সংশ্লিষ্ট পরিবার এই খাতের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। তাই কারো জীবন ও জীবিকা যেন অনিশ্চয়তায় না পড়ে যায়। আমরা যেন দেশবিরোধী কোনো শত্রুর ফাঁদে আর পা না দেই। সকলের সক্রিয় ও দায়িত্বশীল আচরণই এই সেক্টরকে আরো বেশি অগ্রসর অবস্থানে নিতে সহায়ক হবে।