সিরিয়া থেকে আসা অভিবাসী মার্কিন স্থায়ী বাসিন্দা মাহমুদ খলিল বন্দিজীবন শেষে এখন নিউইয়র্কে স্ত্রী ডা. নূর আবদাল্লাহ ও সদ্যজাত সন্তানের কাছে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। খলিলের ১০৪ দিনের বন্দিজীবনের মধ্যেই জন্ম নেয় শিশুটি। খলিলের স্ত্রী বলেন, ‘আজকের রায় আমাদের পরিবারের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায়ের মাত্র সামান্য প্রতিফলন। আজ আমরা খলিলের মুক্তি উদযাপন করছি, যিনি আবার আমাদের ছোট পরিবার ও সেসব মানুষের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন, যারা শুরু থেকেই আমাদের পাশে ছিলেন।’ তবে হোয়াইট হাউস আদালতের রায়ের নিন্দা জানিয়েছে। প্রশ্ন জাগে, খলিলকে বন্দিদশায় পড়তে হলো কেন? রয়টার্স পরিবেশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজায় ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে সক্রিয় থাকায় গত ৮ মার্চ খলিলকে নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটানে তার বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের লবি থেকে আটক করেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, যেসব বিদেশি ছাত্র এসব বিক্ষোভে অংশ নেবে, তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। খলিল হোন ট্রাম্পের এ নীতির প্রথম শিকার।

মাহমুদ খলিলকে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি অভিবাসন আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার আদালতের রায়ে তিনি মুক্তি পান। আদালতের এ রায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এক বড় বিজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনপন্থী এক আন্দোলকারীকে নিশানা করেছে, যা অবৈধ। এদিকে বিচারক বলেন, এ মামলায় আসামিকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইন ব্যবহার করা হয়েছে। এমনটা বলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এটি সংবিধান বিরোধী। মাহমুদ খলিল বলেন, রাজনৈতিক মত প্রকাশের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর লংঘন। তিনি বলেন, ‘আমি ইহুদিবিদ্বেষ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আছি, সেটা আগেও বলেছি।’

আটককেন্দ্রে সাংবাদিকদের সামনে মাহমুদ খলিল তার মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতির নামে বর্ণবাদের চর্চা করছে। খলিল বলেন, এ কেন্দ্রে আরও শতশত মানুষ রয়েছে, যাদের এখানে থাকার কথা নয়। কেউ অবৈধ নন, কোনো মানুষ অবৈধ নন। খলিলের এমন বক্তব্যে দর্শনভাবনা প্রবল। আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্র আসলে অভিবাসীদের একটি দেশ। পৃথিবীর নানা অঞ্চল ও দেশ থেকে নানা ধর্ম-বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ এসে যুক্তরাষ্ট্রে বসতি গড়েছেন। যারা এখন দেশ চালাচ্ছেন অর্থাৎ আইনসভা, প্রশাসন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শোবিজ-যেখানেই দৃষ্টি দেবেন, সেখানেই লক্ষ্য করবেন অভিবাসীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। আসলে দেশটি দাঁড়িয়ে আছে অভিবাসীদের শ্রম ও মেধার ওপর। তাই অভিবাসীদের সাথে বর্ণবাদী বা বৈষম্যমূলক আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কখনো কল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে না। এ জন্যই হয়তো খলিল বলেছেন, এখানে কেউ অবৈধ নন, কোন মানুষ অবৈধ নন।