সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংস্কারের বিষয়ে কর্ণপাত না করে, তাহলে এর মাসুল তাদেরই দিতে হবে । গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সংস্কারের পক্ষে জনগণের মতামত আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তা কর্ণপাত না করলে মাসুল দিতে হবে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার তার মাসুল দিয়েছে। যে পথে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারে পরিণত জয়েছে, অন্যরাও যদি অগ্রসর হয় তারাও দানবে পরিণত হবে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্টিত সুজনের সংলাপে এসব কথা বলেন তারা।
এতে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্বৈরশাসকরা কিভাবে মাসুল দিয়েছে তা আমরা দেখেছি। এমনকি শেখ হাসিনা পতনের বিষয়টি মনে রাখতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, যদি সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কর্ণপাত না করে, তাহলে এর মাসুল তাদেরই দিতে হবে বলে। রাজনৈতিক দলগুলোর এখানে দায়িত্ব আছে। তাদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিলুপ্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও তা মেনে চলে না দলগুলো। আমরা মনে করি সুজনের এ সভায় দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবনা চিন্তা থেকেই তারা এসব কথা বলেছেন। এসব কথা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমার মনে করি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও সংস্কারের বিষয়টি প্রাধান্য দিতে চায়। সে লক্ষ্যে সকল দলের অগ্রসর হওয়া এখন সময়ের দাবি।
বিশিষ্ট জনেরা আগামীতে জুলাই সনদের সুপারিশগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন । তারা ‘বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য এগুলো বাস্তবায়িত করা দরকার বলে মনে করেন। তারা বলেন, ‘জুলাই সনদ প্রণয়নে আমাদের স্বার্থকতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। সনদ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলেই এত দিনের কষ্ট স্বার্থক হবে। এখানে অনেকেরই করণীয় আছে। রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ তাদের এসব কথা প্রনিধানযোগ্য বলে আমরা মনে করি। সংলাপে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত হলে দুদককে পার্লামেন্ট বা সরকারের সরাসরি নির্দেশের বাইরে রাখা সম্ভব হবে। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন শুধু অনুসন্ধান বা অভিযোগ সমাধানে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি স্থায়ী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারবে। তবে, শুধুমাত্র শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার মাধ্যমে দুদকের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না। সাংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে কমিশনের নীতি-নির্ধারণ, বাজেট ও পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপ কমানো সম্ভব হবে।
সংলাপের মূল প্রবন্ধে উঠে আসে, জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী নেতৃত্বের ওপর তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে। জনগণ চায় যে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ব্যক্তি অতিরিক্ত ক্ষমতা অর্জন না করুক, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জরিপে দেখা গেছে, তরুণ এবং মধ্যবয়সি উভয় শ্রেণির জনগণ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণের পক্ষে। শহরাঞ্চলের জনগণ এ প্রস্তাবের গুরুত্ব বেশি দেখেছেন, তবে গ্রামীণ এলাকা থেকেও ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জনগণ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা মনে করেন, একাধিক মেয়াদে একই নেতা থাকলে নীতি প্রণয়ন ও প্রশাসন পক্ষপাতিত্বপূর্ণ হতে পারে, যা রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুজন ইতোমধ্যেই এ ফলাফলকে প্রস্তাবিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থার মতে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে, তবে তা দেশে গণতন্ত্রের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
আমরা মনে করি এ সংলাপে উঠে আসা এ সব বক্তব্য রাষ্ট্রের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সংস্কারের বিষয়টি মাথায় রেখে অগ্রসর হতে হবে।