আমরা যানবাহন সংকটে আছি। যানবাহনের জগতে বিশৃংখলার ঘটনাও কম নয়। রিকশা নিয়ে কত কাণ্ডই না ঘটে গেল। যে যার মত গবেষণা করছে, যন্ত্র লাগাচ্ছে, তারপর রাজপথে ছেড়ে দিচ্ছে। যেন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই দেশে। আমরা সবাই রাজা। কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গেলে আন্দোলন, সড়ক অবরোধ। অনাকাক্সিক্ষত এমন অবস্থায় যেন কিছুটা স্বস্তির বার্তা পাওয়া গেল। বুয়েটের তৈরি ব্যাটারিচালিত রিকশার কথা জানা গেল। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বুয়েটের তৈরি ব্যাটারিচালিত রিকশা শুরুতে ঢাকার দু’সিটি করপোরেশনের পল্টন, ধানমণ্ডি ও উত্তরা এলাকায় চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে। এর আগে রিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরে চালকরা লাইসেন্স পাবেন। এরপর তারা ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে নির্ধারিত এলাকার সড়কে চালাতে পারবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এসব কথা জানিয়েছেন। গত শনিবার দুপুরে গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনে রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রশিক্ষক তৈরির কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে ৩০০ প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে শুরু হওয়া তিন দিনের এ প্রশিক্ষণে ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষক হতে বাছাই করা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, এখন অবৈধ বলে রিকশাচালকদের যে নিপীড়ন করা হয়, ঘুষ চাওয়া হয়, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা আর থাকবে না। যারা নতুন রিকশা নেবেন, তারা নির্ধারিত রাস্তায় সম্পূর্ণ অধিকার নিয়ে চালাতে পারবেন। কেউ হয়রানি করতে পারবেন না। রিকশাচালকদের জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা যখন আহত হচ্ছিলেন, তাদের যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়া, হাসপাতালে নেওয়াÑএসব ক্ষেত্রে রিকশাচালকেরা জীবনবাজি রেখে বন্দুকের গুলীর সামনে তাদের নাগরিক অধিকার দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন এলাকায় নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশার অনুমতি দেওয়া হবে এবং সেগুলো শুধু নির্ধারিত সড়কেই চালানো যাবে।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, অনুমোদিত রিকশা কবে থেকে চলবে, পুরানো অনুমোদনহীন রিকশা নিয়ে সিদ্ধান্ত কী এবং অনুমোদিত রিকশার চার্জিং পয়েন্ট কোথায় হবে? তবে এসব প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, পরিবর্তনটা ধাপে ধাপে হবে। যেসব রিকশা অনুমোদিত নয়, সেগুলো পর্যায়ক্রমে সরানো হবে। তবে এগুলো যে উচ্ছেদের মাধ্যমে সরানো হবে এমন নয়, কোনো জবরদস্তিতে যাওয়া হবে না। অনুমোদিত রিকশা কিনে চালানো শুরু করলেই অন্য রিকশাগুলো উঠে যাবে। নতুন রিকশা নামলে অনুমোদনহীন রিকশার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। অনুমোদিত নতুন রিকশার দাম দু’লাখ টাকার কম হবে বলে জানান প্রশাসক। নতুন রিকশা বুয়েট তৈরি করায় প্রযুক্তিগত সঙ্কট দূর হবে বলে আশা করা যায়। ফলে জনমনে দুর্ঘটনার আতঙ্ক কমতে পারে। তবে পরিবর্তনের এ কাজটা খুব সহজ নাও হতে পারে। আমরা প্রশাসন, রিকশাচালক ও রাজনীতিবিদদের যৌক্তিক ভূমিকা আশা করি।