সম্পাদকীয়
গাজাবাসীর ভোগান্তির শেষ কোথায়!
১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। ইসরাইল এখনো এ চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ এতে গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ সমাপ্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে
Printed Edition
১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। ইসরাইল এখনো এ চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ এতে গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ সমাপ্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বরং প্রথম ধাপকে দীর্ঘায়িত করে আরও বন্দি মুক্তির চেষ্টা করছে, যা হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইসরাইল জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে দিনকয়েক আগে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। আর সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে গাজায় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের গাজায় পণ্য প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার ফলে ফিলিস্তিনি উপত্যকায় মানবিক সংকট তীব্র হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে, এবং কর্মকর্তারা পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন সরাসরি সমুদ্রে চলে যেতে পারে বলেও তারা আশংকা করছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা, ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, মানবিক সহায়তা বন্ধ করার এ সিদ্ধান্ত যুদ্ধক্লান্ত বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে যে, গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গাজায় বর্তমানে চালু থাকা ২২টি বেকারির মধ্যে ৬টি ইতোমধ্যেই রান্নার গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। যদি ডিজেল বা ময়দা শেষ হয়ে যায়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই বাকি বেকারিগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যদি না সীমান্ত খুলে পণ্য প্রবাহের অনুমতি দেওয়া হয়।
নতুন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে, ইসরাইলের জ্বালানি মন্ত্রী এলি কোহেন রোববার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ইসরাইল ইলেকট্রিক কর্পোরেশনকে গাজায় বিদ্যুৎ বিক্রি না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার এ ঘোষণার পরই গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টিও হামাসের উপর চাপ সৃষ্টি করে জিম্মিদের মুক্তি আদায়ের একটি কৌশল বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
ফিলিস্তিনি পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে গাজার কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের জন্য প্রতিদিন ১৮,০০০ ঘনমিটার পানি উৎপাদনকারী একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার বিদ্যুৎ বিতরণ প্ল্য্যান্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ থাবেত রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে ওইসব এলাকার মানুষ সুপেয় ও নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হবে, যা পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি করবে। এ সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। এখন পৌর কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে অপরিশোধিত পয়ঃনিষ্কাশন সমুদ্রে ফেলবে, যা গাজার সীমানার বাইরেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।”
ভাবলে বিস্মিত হতে হয় যে, গাজা এমন একটি উপত্যাকা যেখানকার মানুষকে খাবার, সুপেয় পানি, ওষুধ, বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা জ¦ালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের জন্য দখলদার ইসরাইলের ওপর নির্ভর করতে হয়। আর এমন নির্ভরশীলতার সুযোগ নিয়ে ইসরাইল গাজাবাসীকে নিয়ে রীতিমতো গিনিপিগের মতো করে এক্সপেরিমেন্ট করছে। গাজা প্রকৃতার্থেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ উম্মুক্ত কারাগার। আরব দেশগুলো গাজার পুনর্গঠন নিয়ে সম্মেলন করলেও আপদকালীন পদক্ষেপ হিসেবে গাজাবাসীর ভোগান্তি কমিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ইসরাইলের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না।
রমজান মাস অতিবাহিত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেখানে নানা আয়োজনে রোজা পালন করছে সেখানে গাজার মুসলিম ভাই-বোনেরা দিনযাপন করছে অন্ধকারে, অনিশ্চয়তায়। সেখানে জীবন যাপন করার মতো ন্যূনতম পরিবেশ বা সুযোগ নেই। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিনযাপন করা মজলুম মানুষগুলোকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশ্বমোড়লেরা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, আমরা এটুকুই প্রত্যাশা করি। ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতা জাগ্রত হোক, সরব হোক।