বর্তমান সভ্যতায় সবচাইতে মন্দ চিত্র গাজার চিত্র। ২২ মাসের বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুর্ভিক্ষের মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে উপত্যকাটির মানুষদের। তবে ইসরাইলের এমন নৃশংস আচরণের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছে বিশ্বের মানুষ। এমন বাতাবরণে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে বেশ অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কানাডা। এ নিয়ে বিগত কয়েক দিনে উন্নত সাত দেশের জোট ডিজ-৭ এর তিন সদস্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বললো। গত বুধবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে তার দেশ। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় মানুষের দুর্দশা অসহনীয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম সম্মেলনের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কানাডার। তবে এর জন্য কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন মার্ক কার্নি।
কয়েকদিন আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে বর্তমানে ১৫০টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মাখোঁ তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলে ফ্রান্স এ দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। তখন বাকি থাকবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইসরাইল কিছু শর্ত না মানলে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারেন। ফলে বলা চলে, জোরালো হচ্ছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি।
এমন বাস্তবতায়ও ইসরাইলের নৃশংসতা থামছে না। গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে ত্রাণ নিতে গিয়ে গত বুধবার ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। এছাড়া অবরুদ্ধ উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ উপত্যকায় অপুষ্টিতে এ পর্যন্ত ১৫৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৮৯ জনই শিশু। গত মঙ্গলবার একটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এরপরও ইসরাইল হত্যা, নৃশংসতা ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মত নিষ্ঠুরতা চালিয়ে যাচ্ছে কাদের সমর্থনে? ইসরাইল তো বিশ্বে প্রায় একঘরে রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশটি এখন ঘৃণার পাত্র। আর এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রই এখন ইসরাইলের একমাত্র ভরসা। ফলে প্রশ্ন জাগে, ইসরাইলের আগ্রাসন ও হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কারণ কী। এমন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের বদনাম হচ্ছে। মার্কিন জনগণ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।