পাকিস্তান ও ভারত দু চিরবৈরি দেশের মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত যুদ্ধ এখন চলমান। যুদ্ধে কেউ মূলত লাভবান হয় না, শিকার হয় দেশের সাধারণ মানুষ। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামালায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার জেরে বড় প্রতিবেশী ভারত ঘোষণা দিয়েই পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে পাকিস্তানও। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যরাতে এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি দু প্রতিবেশী দেশকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে এ উত্তেজনা আরও বাড়তে না পারে। স্থানীয় সময় ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বার্তা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তিনি বলেন, পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘ নিবিড়ভাবে নজর রাখছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে ওঠা এ সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। ডুজারিক জানান, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পাল্টা পদক্ষেপের কারণে দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন পটভূমিতে জাতিসংঘ মহাসচিব দু দেশকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো সমস্যা অর্থপূর্ণ আলোচনা এবং পারস্পরিক সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি, সেটিই হওয়া উচিত।’ তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সামাল দিতে শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক পথ অনুসরণের আহ্বান জানান। এ ধরনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ। কিন্তু যুদ্ধ চলছেই।
খবরে বলা হয়েছে, গত ৮ মে বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যদের মধ্যে সারারাত ব্যাপক গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। হালকা অস্ত্রের পাশাপাশি দুদেশের সেনারা একে অন্যের অবস্থান লক্ষ্য করে কামানের গোলাও বর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। এএফপির খবরে আরো বলা হয়েছে,
গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ দু যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ভারত সে রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দু দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাবর্ষণের ঘটনার মধ্যেই এ হামলা চালায় ভারত। ভারত জানায়, ওই হামলায় বুধবার ভোররাতে পাকিস্তানের নয়টি ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ ধ্বংস করে দেয়া হয়।
যতদূর জানা যাচ্ছে ভারত একে সন্ত্রাসী আস্তানা বললেও হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল মসজিদ ও সাধারণ বাড়িঘর। উপাসনালয় কি করে হামলার লক্ষ্যবস্তু হয় এ প্রশ্ন জাগে। মসজিদে হামলা বা মসজিদ ধ্বংস করা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত ভারতের।
গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় নয়াদিল্লি। তবে কাশ্মীরের হামলার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে পাকিস্তান। ভারত প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যুদ্ধের আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মানছে না বলেই মনে হচ্ছে। এটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, ভারতের এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। তাদের থিংকট্যাংকগুলোকে বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারকে সে মতে পরামর্শ দেয়া উচিত।
এদিকে ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে বলেন, হামলায় পাকিস্তানের নাগরিক হত্যার জবাব দেবে তার দেশ। হত্যাকাণ্ডে হতাহত লোকজনের রক্তের প্রতি ফোঁটার বদলা নেয়া হবে। বুধবারের সংঘাতে এ পর্যন্ত দুদেশে ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামাবাদ বলেছে, ভারতের হামলায় তাদের ৩১ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের গোলার আঘাতে ভারত সীমান্তে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নয়াদিল্লি। তবে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে গুলিবর্ষণের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান।
যুদ্ধের যা গতি প্রকৃতি তাতে আমরা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। আমরা যুদ্ধের দামামা বন্ধের জন্য উভয় দেশের প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি যুদ্ধ কার্যত কোন সমাধান নিয়ে আসে না, নিয়ে আসে ধ্বংস, মৃত্যু আর কান্না।