বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে বড় ধরনের সুখবর পাওয়া গেছে। তার তা দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ সুখবর দেন। আর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর হচ্ছে, বাংলাদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিতুন ইসমাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বৈঠকের পর এ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটমুক্ত এবং কম খরচে শ্রমিক প্রেরণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করেন। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিতুন ইসমাইলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় দেশটিতে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের, বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা, অবৈধ কর্মীদের বৈধকরণ এবং নতুন শ্রমিক প্রেরণের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওং-এর সঙ্গে বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কল্যাণ, নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ, ন্যায্য এবং সম্মানজনক কর্মসংস্থান ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। স্টিভেন সিম বলেন, মালয়েশিয়ার মাদানি কাঠামোর মধ্যে ইহসান, কেডিলান এবং কেসেহাতানের মূল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদেশি কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা, কল্যাণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এদিকে দৈনিক সংগ্রাম অনলাইন জানাচ্ছে, ড. আসিফ নজরুল ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি গত পরশু মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন। সেখানে ইতোমধ্যে তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। সে বৈঠকের অগ্রগতি জানাতে তিনি ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রথম খবর হলো, আপনারা জানেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত বছর বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। তিনি আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বন্ধু। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যারা শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় আসতে পারেননি, তাদের সুযোগ দেবেন। এটার ভিত্তিতে অনেক আলোচনা হয়েছে। তারা ৭ হাজার ৯২৬ জনের তালিকা করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সুযোগ দেয়া হবে।’ আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান। আমরা জেনেছি, মালয়েশিয়া এক থেকে দেড় লাখ লোক নেবে। মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্সমন্ত্রী এক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নেবেন তারা। আমরা অনুরোধ করেছিলাম ভিসা যেন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বিষয়টি অনেক ভালোভাবে বুঝিয়েছি তাদের। তারা বিবেচনা করবেন এবং সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছে।’

প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের শ্রমিকরা মাল্টিপল ভিসা পায় না, পায় সিঙ্গেল ভিসা। এটা নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি (মন্ত্রী) শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বলেছি, মালয়েশিয়ায় যারা অবৈধ হয়েছেন, তাদের বৈধ করতে। তারা বলেছেন, যাদের ভিসা শেষ তাদের ক্ষেত্রে হয়ত সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি বলেছি, অনেক সময় মালিকের গাফিলতির কারণেও এটা হয়ে থাকে। তখন তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ তিনি জানান, মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিকিউরিটি, নার্সসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে জনবল নেয়ার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আগ্রহও দেখিয়েছেন। ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এটা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বন্ধুত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার ভালো বন্ধু। এছাড়াও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নিয়মিত নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা তার নির্দেশনা মতো কাজ করছি।’

দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে নানা সংকটে রয়েছেন। এ জনশক্তি আমরা বিদেশে পাঠিয়ে তা থেকে লাভবান হতে পারি। উপদেষ্টা বিভিন্ন খাতে লাখো লোকের মালয়েশিয়ায় কাজ করতে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন তা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানাই আমরা। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মালয়েশিয়ায় গিয়ে বিপদে পড়া লোকের অভাব নেই। তাদের অসুবিধা দূর করে সেখানে কাজের সুযোগ তৈরির জন্য সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালাবে বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সেখানে দিনের পর শ্রমিকরা রাস্তায় বসে থেকেছে, তাদের ডিপোর্ট করা হয়েছে। আমরা মনে করি আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা বর্ণিত এই বিষয়গুলো কার্যকর করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বাজার সম্প্রসারিত করা হবে দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।