DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো আচরণ নয়

রাজনীতি নিয়ে কখনো মানুষ খুশি ছিল, কখনো বা ছিল সংক্ষুব্ধ। একারণেই তো রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপ্লব দেখা যায়, গণঅভ্যুত্থান দেখা যায়, দেখা যায় সংস্কার আন্দোলনও। সে ধারাবাহিকতায় প্রিয় স্বদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের আবির্ভাব।

Printed Edition

রাজনীতির চিত্র যেমনই হোক না কেন, মানবসভ্যতায় রাজনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের জীবনে রাজনীতি প্রভাব ফেলে, প্রভাব ফেলে সমাজ, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক পরিম-লে। তাই বিরক্ত হয়ে যতই রাজনীতি থেকে বিযুক্ত হতে চাওয়া হোক না কেন, অক্টোপাসের মতো রাজনীতি সকলকেই যুক্ত করেই ফেলে। বাস্তবতা হলো, রাজনীতির সাথে নাগরিকের সম্পর্ক চিরন্তন। অবশ্য বিরাজনীতির একটি তৎপরতাও কখনো কখনো রাষ্ট্রে লক্ষ্য করা যায়। স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট বা জান্তার এমন তৎপরতা অবশেষে হালে পানি পায় না। মানুষ রাজনীতিতে যুক্ত হয়েই যায়। কারণ, মানুষ যে রাজনৈতিক প্রাণী। পৃথিবী নামক এ গ্রহের সুদীর্ঘ ইতিহাস এ কথারই জানান দেয় যে, মানবজাতি কখনো রাজনীতিমুক্ত ছিল না। তবে রাজনীতিতে রকমফের ছিল। রাজনীতি নিয়ে কখনো মানুষ খুশি ছিল, কখনো বা ছিল সংক্ষুব্ধ। একারণেই তো রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপ্লব দেখা যায়, গণঅভ্যুত্থান দেখা যায়, দেখা যায় সংস্কার আন্দোলনও। সে ধারাবাহিকতায় প্রিয় স্বদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের আবির্ভাব।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবের সম্ভাবনাও ছিল। তেমন আকাক্সক্ষা এখনো জাতির মধ্যে বিদ্যমান আছে। তবে বাস্তবতা হলো, দেশ ও জাতি এখন ঐক্য, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে হাঁটছে। এখন অনেকেই কথা বলছেন। বুদ্ধিজীবী, চিন্তক, ছাত্র, রাজনীতিবিদরা মত প্রকাশে বেশ সক্রিয় আছেন। অনেকে কাজ করছেন এবং নানা কর্মসূচি গ্রহণের কথাও জানাচ্ছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এমন এক উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেল জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে। জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে চব্বিশের রক্ত¯œাত গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তথ্যসম্বলিত ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ শীর্ষক স্মারকের মোড়ক উন্মোচন হয় সেদিনের অনুষ্ঠানে। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশের রাজনৈতিক দল ও সব অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘শহীদরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশ চেয়েছিল। চেয়েছে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ। তারা চলে গেছেন, আমানত আমাদের ঘাড়ে। তাদের রক্তের দিকে একটু তাকান। তরতাজা সে শিশু, যুবক, নারী-পুরুষের দিকে তাকান। যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের দিকে তাকিয়ে বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এমন কোনো অপকর্ম কেউ করবেন না। যদি করেন, শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে।’ জুলাই বিপ্লবের স্মারক প্রকাশ প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘যে কাজে জামায়াত হাত দিয়েছে, এর দায়িত্ব সবার। আমরা এ কাজে কোনো ক্রেডিট নিতে চাই না। আমরা শুধু একটা নৈতিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আমাদের চেয়ে আরও সুন্দর করে এ কাজ করতে সরকারসহ অন্যদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। তাহলে এ কাজটা সার্থক হবে। সে ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা দরকার সকলের।’ জামায়াত আমীরের বিনয়ভাব এবং সবাইকে নিয়ে কাজ করার যে আগ্রহ, সেটা আসলে উন্নত সংস্কৃতির পরিচায়ক। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে, উন্নত সংস্কৃতির চর্চা চাচ্ছে, যা পুরনো রাজনীতিতে ছিল অনুপস্থিত। রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি উন্নত সংস্কৃতির চর্চা হয়, তাহলে তার প্রভাব সমাজ ও রাষ্ট্রে লক্ষ্য করা যাবে। উল্লেখ্য যে, স্মারকটির জন্য ২টি টিম সারা দেশে কাজ করেছে। তারা ৭৩১ শহীদের পূর্ণাঙ্গ জীবনী এই স্মারকে গ্রথিত করতে সমর্থ হয়েছেন। এ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। শহীদদের সর্বশেষ তথ্য পরবর্তী সংকলনে যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। জুলাই বিপ্লবের আদ্যোপান্ত জানার ক্ষেত্রে স্মারকটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জুলাই শহীদদের স্মারক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন অপকর্ম কেউ করবেন না। কেউ করলে শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে। এ বক্তব্য আসলে শুধু একজন আমীরের নয়, এ বক্তব্যে পুরো জাতির আকাক্সক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আশা করি সব অংশীজন বিষয়টি উপলব্ধি করবেন। আর উপলব্ধির পথে হাঁটতে হলে তো আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথে হতে হবে সমৃদ্ধ।