২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় দেশে ৫৮৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এমন একটি খবর গতকাল দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু এক দিনে ৬ জনের মৃত্যু ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতাই প্রকাশ করছে।

প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় দেশে ৫৮৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গুতে মৃতদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনজন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে রয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আজকের সর্বোচ্চ ১৪৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৪ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০ জন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দু’জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০৯ জনসহ চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৪৫ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক আট শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক দুই শতাংশ নারী। দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকার বাইরেও বেশ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

বর্ষা শুরু হলেই ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এ সময়ে ডেঙ্গু বাহিত মশা খুব বেশি সক্রিয় হয় এবং এর কামড় থেকে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু একটি গুরুতর অসুখ। সাধারণ জ্বরের তুলনায় ডেঙ্গু অনেক বিপজ্জনক। কারণ এর মৃত্যুহার প্রায় ১.৩%। সময়মতো চিকিৎসা নিলে শরীরে লাল রক্ত কণিকা কমে যাওয়া রোধ করা যায় এবং অনেক জটিলতা থেকে বাঁচা যায়। বর্ষা শেষে এ সময়টায় ঘনঘন বৃষ্টির দরুণ এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। এ এডিস এজিপ্টি মশা ডেঙ্গু ছড়ায়। আক্রান্ত মানুষকে কামড়ালে ভাইরাস মশার শরীরে যায়; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ হয় না। এরপর মশা সুস্থ কাউকে কামড়ালে ভাইরাস তার রক্তে ঢুকে যায় এবং সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চলতি বছরের জুলাই থেকে আগস্ট এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এ থেমে থেমে বৃষ্টি এবং তারপর প্রচণ্ড গরম ডেঙ্গুর বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখে।

নগরকেন্দ্রিক এ রোগ কমাতে মশার বংশবিস্তার রোধ জরুরি। এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু এবং এতে সরকারের তৎপরতার অভাবের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তারা বলেন, মশা বাড়লে ডেঙ্গু রোগ বাড়বে। মশার নিয়ন্ত্রণ তাই জরুরি। কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণ না হলে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যাবে না। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়ার ধরন ও মশার প্রজনন চক্র বিবেচনায় এই সময়টি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সেই কাজ যথাযথভাবে করতে পারছে না বলেই মনে করার কারণ রয়েছে। আমরা বলব, এক দিনে ছয়জনের মৃত্যু একটি সতর্কবার্তা। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে সামনে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে। আমরা মনে করি, ডেঙ্গুর ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন ও পৌর সভাগুলোর আরও সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।