পবিত্র ঈদুল আযহা আর কিছুদিন পরই। প্রতিবছর এই ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যান এবং প্রিয়জনের সাথে মিলিত হয়ে উৎসব পালন করেন। প্রতিটি জাতীয় উৎসব-পর্বে মানুষ মাটির টানে উৎসে ফিরে যান। স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। গ্রামের সঙ্গে তাদের আত্মিক সম্পর্কটি এখনো অটুট ও অম্লান রয়ে গেছে। এটি আমাদের সামাজিক সংহতিকেও সুদৃঢ় করে। বছরের অন্যান্য সময়ে ছুটিছাটা তেমন পাওয়া যায় না বলেই ঈদের সময় অনেক বেশি মানুষ শহর থেকে গ্রামে যান। ঈদ মানেই আনন্দ, আর এ আনন্দ তখনই পূর্ণতা লাভ করে, যখন পরিবারের সবাই একত্রে মিলিত হয়ে উদযাপন করার সুযোগ মেলে। এ আনন্দ সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেভাবেই হোক ঈদে বাড়ি পৌঁছানো চাই! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ঈদের আগে টিকিট পাওয়াটা যেন সোনার হরিণ পাওয়া। অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রেও দেখা যায় এক মিনিটের মধ্যেই যেন সব টিকিটি গায়েব হয়ে যায়।

আমাদের ঈদ যাত্রা প্রায়শই নির্বিঘ্ন হয় না। অতীতে স্বৈরাচারী আমলে দেখেছি সরকার ছিল নির্বিকার। দলীয় লোকদের সুবিধা দিতে ছিল এমন ব্যবস্থা তা বোঝা যেত। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে গত ঈদুল ফিতরের ঈদ যাত্রা তুলনামূলক কম বিড়ম্বনাপূর্ণ ছিল। কিন্তু আসন্ন ঈদুল আযহার সময়ে সে বিড়ম্বনা আবার বাড়ার শংকা দেখা দিয়েছে। তারই আভাস মিলেছে নৌপরিবহন উপদেষ্টার বক্তব্যে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর, আসন্ন ঈদে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের সময় যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে প্রায় দেড় থেকে দু’গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদে এ ধরনের অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার এ কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে চাই। আমরা দেখতে চাই শুধু নৌপথে নয় সড়ক ও রেল পথেও যাত্রী দুর্ভোগ ও টিকিট নৈরাজ্য বন্ধ হোক।

পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। নন এসি বাসে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া রাখতে দেখা গেলেও এসি বাসের ভাড়া বাড়তি রাখতে দেখা যায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যাওয়া-আসা করা একটি বাস কোম্পানি তাদের এসি বাসের ভাড়া যেগুলো ১ হাজার ছিল সেটি ঈদযাত্রায় অগ্রিম টিকিটের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছে। একই অবস্থা উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ রুটে চলা এসি পরিবহনগুলোর। তবে এত কিছুর পর গত ১২ মে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ২০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয় বাস মালিকদের পক্ষ থেকে। আমরা মনে করি এই দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়। এটা মানা যায় না।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ঈদ এলেই যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করার বিষয়টি বেশ পুরনো। সড়কে ১৫ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নৈরাজ্য করেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। কিন্তু গত ঈদে স্বস্তির ঈদযাত্রা হলেও বেশিরভাগ রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে এসি বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা যেন বাস মালিকদের প্রধান টার্গেট হয় ঈদযাত্রায়। আমরা মনে করি, ভাড়ার ক্ষেত্রে এ নৈরাজ্য বন্ধ হওয়া দরকার। সরকারের উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।