দেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের এ সময় নির্ধারণ করেছেন। এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক রক্ত আর শাহাদাতের বিনিময়ে গত বছর ৫ আগস্ট দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছিল সে সব উদ্দেশ্য ও দাবিগুলো পূরণের কথাটি আমরা স্মরণ করতে চাই। আর তা হলো সকল অনিয়ম দূর করে রাষ্ট্রের সংস্কার ও সকল হত্যার বিচার নিশ্চিত করণ। বিগত এক বছরে তা সম্পন্ন হয়নি বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে এবং এসব দাবি পূরণেরও আহ্বান ধ্বনিত হচ্ছে। বিগত তিনটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি, জাতি বলতে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে অবাধ নির্বাচন দেখেনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা করেছে।

সঙ্গত কারণেই নির্বাচনের আগে এসব দাবিদাওয়া পূরণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এসব দাবি পূরণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। অনুরূপ দাবি জানিয়েছে আরো অনেকগুলো দল। দৈনিক সংগ্রামসহ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে এসব জানা গেছে। খবরে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, সরকারের নির্বাচনের রোডম্যাপকে শুধুমাত্র একটি দল স্বাগত জানিয়েছে। গণতন্ত্রকামী দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানায়নি, জানাতে পারেনি। কারণ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের সংস্কার, সকল গণহত্যার বিচার নিশ্চিত এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এদেশের জনগণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখেনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জাতি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা করেছে। এজন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার চেয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণাও দিয়েছিলো রাষ্ট্রের সংস্কার করবে। কিন্তু এ সরকারের উচিত ছিল আগে নিজেরা যে চেয়ারে বসেছে সে চেয়ারগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার ও পবিত্র করা।

গত বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর রোডে এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর (উত্তর ও দক্ষিণ) উদ্যোগে জুলাই ঘোষণা ও জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান এবং সে আলোকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের ৭১ শতাংশ জনগণ পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাইলেও, একটি দল জনগণের মতের বিপক্ষে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। যারা পার্লামেন্টে গিয়ে সংস্কার করবে বলছে, এখন সংস্কারের আপত্তি কেন প্রশ্ন রেখে বক্তারা বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবে বলা দল কিভাবে নিশ্চিত হয়েছে তারাই এবার ক্ষমতায় বসবে? তাদের এ কথায় জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। এতে বুঝা যায়, তারা হাসিনা মার্কা যেনতেন একটি তামাশার নির্বাচন করতে চায়। অনতিবিলম্বে জনগণের দাবি মেনে জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে হবে।

আমরা মনে করি এসব দাবি খুবই যুক্তিসঙ্গত। নির্বাচনের আগে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হওয়া দরকার। জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে না পারলে রাষ্ট্র সংস্কারের যে মহান লক্ষ্য নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল তা পুরাপুরি অর্জিত হবে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এসব বিষয়াদি মীমাংসিত হওয়া উচিৎত বলেও আমরা মনে করি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদের যে মহান লক্ষ নিয়ে অগ্রসর হয়েছে তা অব্যাহত রাখবে। সকল মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এসব বিষয়ে আলাপ আলোচনা-সংলাপের মাধ্যমে একটি নিষ্পত্তিতে আসা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।