DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহ সঙ্গীত কেন

তেজষ্ক্রিয়ার প্রভাব থাকে দীর্ঘকাল। এমন অভিজ্ঞতা তো জাপানের হয়েছে। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা আঘাত হেনেছিল। ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাটম্যান’ নামক বোমা দু’টির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবার বলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেশি দূরে নয়। কেন এমন আশঙ্কা?

Printed Edition

খবরের শিরোনাম ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেশি দূরে নয়’। এমন মন্তব্য কোনো সাধারণ মানুষের নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ‘বিশ্বযুদ্ধ’ বিষয়টা কেমন তা তাঁর ভালোই জানার কথা। বিশ্বযুদ্ধে তো শুধু জনপদ ধ্বংস হয় না; মানুষ, পশু-পাখি সবই মরে; প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্যও ধ্বংস হয়। জলবায়ু, পরিবেশ-প্রতিবেশ সবই তার স্বাভাবিকতা হারায়। তেজষ্ক্রিয়ার প্রভাব থাকে দীর্ঘকাল। এমন অভিজ্ঞতা তো জাপানের হয়েছে। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা আঘাত হেনেছিল। ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাটম্যান’ নামক বোমা দু’টির বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবার বলছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেশি দূরে নয়। কেন এমন আশঙ্কা?

গত বৃহস্পতিবার মিয়ামিতে একটি সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তবে এ যুদ্ধ করে কোনো পক্ষের কোনো লাভ হবে না। বাইডেন সরকার যদি আর একটি বছর থাকতো, তাহলে আপনারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে থাকতেন। তবে তাঁর প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে এ ধরনের যুদ্ধে জড়াতে দেবে না বলে দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে অংশ নেবে না বরং বন্ধ করবে। ট্রাম্প বলেন, আমরা এ মূর্খ ও অন্তহীন যুদ্ধ থেকে মানুষকে থামাতে যাচ্ছি। আমরা নিজেরা এতে অংশ নেব না। তবে আমরা যে কারও চেয়ে আরও শক্তিশালী হবো। যদি কখনো যুদ্ধ শুরু হয়, এমন কেউ নেই যে, আমাদের কাছাকাছি আসতে পারবে।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ভøাদিমীর জেলেনস্কিকে দায়ী করে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি যুদ্ধে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগে রাজি করিয়েছেন, যা জেতা সম্ভব নয়। এএনআই জানিয়েছে-তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও জেলেনস্কিকে নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আর আন্তর্জাতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মানুষ বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে থাকে। ট্রাম্পও নিজেকে প্রকাশ করলেন। তার বক্তব্যে ব্লেমগেম আছে, সমরশক্তির অহংকার আছে এবং আছে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ভুল বিশ্লেষণ। ইউক্রেন যুদ্ধের দায়টা কার? আক্রমণ তো করেছে পুতিন, তাহলে জেলেনস্কিকে দায়ী করা হয় কোন বিবেচনায়। আসলে বর্তমান সভ্যতায় পরাশক্তির কোনো দোষ হয় না; যত দোষ দুর্বলের। ইউক্রেন এবং ফিলিস্তিন-এর বড় প্রমাণ। আর বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে কথা কম বলাই ভালো। ইউক্রেন, ফিলিস্তিন কিংবা পৃথিবীর দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর কারণে বিশ^যুদ্ধ হয় না। বিশ্বযুদ্ধ হয় আমেরিকা ও রাশিয়ার মত বড় বড় দেশ এবং পরাশক্তির কারণেই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের তেমন বার্তাই দেয়। বর্তমান সময়েও যেসব এলাকায় যুদ্ধ চলছে কিংবা যুদ্ধের পরিবেশ বিরাজ করছে, সেখানকার চিত্রটা কেমন? কারা এসব যুদ্ধের কারিগর? ভূ-রাজনীতির সাথে কারা জড়িত? আস্থাহীনতার এমন সভ্যতায় মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় কারা লিপ্ত? অস্ত্র ব্যবসায় কারা জড়িত? নিশ্চয় ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো নয়। আর অস্ত্র বিক্রির জন্য তো যুদ্ধ প্রয়োজন। ফলে সহজেই উপলব্ধি করা যায়, ছোট যুদ্ধ কিংবা বিশ্বযুদ্ধ-এসবের পেছনে জড়িত থাকবে পরাশক্তিরাই। তাই বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় ট্রাম্পের মত বিশ্ব নেতারা তথ্যভিত্তিক ও ন্যায়নিষ্ঠ বক্তব্য রাখলেই পৃথিবীর মঙ্গল। আর পৃথিবীর মঙ্গলের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভোট-বড় সব দেশের মঙ্গল।