মাৎস্য-ন্যায়ের কথা আমরা জানি। বিষয়টা মোটেও কাক্সিক্ষত নয়। কিন্তু মৎস্য-পতনের কথা আমরা কতটা জানি? মৎস্যের পতন শুরু হয় কিন্তু মাথা থেকে। অর্থাৎ মৎস্যের মাথায় যখন পচন শুরু হয়, তখনই পতন ঘটে মৎস্যের। এর সাথে মানব সমাজের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সমাজের যারা মাথা বা নেতা, সেখানে একবার পচন ধরে গেলে সমাজের পতন অনিবার্য। সেটা গ্রামের সমাজ হোক, কিংবা শহুরে সমাজ-তাতে কিছু যায় আসে না, পচন ধরলে পতন অনিবার্য। বিশ্বসমাজও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। বর্তমান ভ্রষ্টসভ্যতা এর বড় প্রমাণ। বিশ্বনেতৃত্বে পচন ধরায় বর্তমান বিশ্ব ক্রমশই মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। গাজা এবং ইউক্রেনে এখন মানুষের বসবাসের চিত্রটা কেমন?
গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতা জাতিগত নিধনের শামিল বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই, এখন উল্লেখ করছেন বিশ্বের খ্যাতিমান ইহুদি ব্যক্তিত্বরাও। এক খোলা চিঠিতে তারা ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। ২২ অক্টোবর বুধবার খোলা চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে লেখা এ চিঠিতে সাবেক ইসরাইলি কর্মকর্তা, অস্কারজয়ী ব্যক্তিত্ব, লেখক-বুদ্ধিজীবীসহ ৪৬০ জন সই করেছেন। তারা ফিলিস্তিনের গাজা, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এমন সময় চিঠিটি প্রকাশ পেল যখন (২৩ অক্টোবর) বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা বৈঠকে বসছেন। ইইউ নেতারা মানবাধিকার লংঘনের দায়ে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবগুলো স্থগিত করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা বিশ্বনেতাদের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রায় মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ, দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। এছাড়া শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে যারা কথা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগ না দেওয়ার অনুরোধও জানান এই ইহুদি ব্যক্তিত্বরা। তাদের সই করা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘যখন প্রমাণ পাওয়া শুরু করেছে যে, ইসরাইলের কর্মকাণ্ড জাতিগত নিধনের আইনি সংজ্ঞার সাথে মিলে যায়, তখন শোকে আমাদের মাথা নত হয়ে আসে।’ খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ইসরাইলের পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার আব্রাহাম বুর্গ, ইসরাইলের সাবেক শান্তি আলোচক দানিয়েল লেভি, ব্রিটিশ লেখক মাইকেল রোজেন, কানাডীয় লেখক নাওমি ক্লেইন, অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা জোনাথন গ্লেজার, মার্কিন অভিনেতা ওয়ালেস শন, এমিজয়ী ইলানা গ্লেজার, হান্না এইনবাইণ্ডার এবং পুলিৎজারজয়ী বেঞ্জামিন মোজার।
এদের মাথা কি পচেনি? হয়তো পচেনি, তাইতো তারা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের জবাদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন, ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের। গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তার দাবিও জানিয়েছেন তারা বিশ্বনেতাদের প্রতি। যাদের মাথা পচে গেছে, তারা কি এমন আহ্বানে সাড়া দিতে সক্ষম হবেন?