DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

খোশ আমদেদ মাহে রমযান

বছর ঘুরে আমাদের জীবনে ফিরে আসে পবিত্র মাহে রমযান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মহিমান্বিত মাসকে আমরা আবেগমথিত আনন্দচিত্তে জানাই স্বাগত। রমযান মুবারাক, রমযান কারিম। রমযান এলে মুসলিম বিশ্বে সাড়া

Default Image - DS

বছর ঘুরে আমাদের জীবনে ফিরে আসে পবিত্র মাহে রমযান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মহিমান্বিত মাসকে আমরা আবেগমথিত আনন্দচিত্তে জানাই স্বাগত। রমযান মুবারাক, রমযান কারিম। রমযান এলে মুসলিম বিশ্বে সাড়া পড়ে যায়, আমরা উপলব্ধি করি প্রতিটি মুসলিম এক আল্লা’র বান্দা এবং এক উম্মা’র সদস্য। রমযান পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস, সিয়াম পালনের মাস। কুরআন আমাদের আলোকিত জীবনের পথ দেখায়, সিয়াম আমাদের জবাবদিহির চেতনাসমৃদ্ধ সংযত ও অনুগত বান্দাহ হিসেবে জীবন পরিগঠনে সাহায্য করে। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে সিয়াম বা রোজার মূল লক্ষ্য হলো ‘তাকওয়া’ অর্জন। পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হযেছিল। সম্ভবত এর ফলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।”

পবিত্র কুরআনের আলোকে উপলব্ধি করা যায়, তাকওয়া অর্জনের ওপরই নির্ভর করছে আমাদের সিয়ামের সাফল্য। তাই তাকওয়ার মর্মবাণী উপলব্ধি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ হলো ‘ভয় করা।’ আর পারিভাষিক অর্থ হলো, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সকল আদেশ মানা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা।’ অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে তাঁর সব আদেশ-নিষেধ মানতে হবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করতে হবে। একবার হযরত ওমর (রা.) উবাই ইবনে কা’ব (রা.)কে জিজ্ঞেস করেন, তাকওয়া কাকে বলে? তখন উবাই (রা.) ওমর (রা.)কে বললেন, ওমর তুমি কি কখনো ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর দিয়ে পথ চলনি? ওমর (রা.) বললেন, চলেছি। উবাই (রা.) বললেন, তখন তুমি কী করেছ? ওমর (রা.) বললেন, তখন আমি জড়সড় হয়ে পথ চলেছি, যাতে কাঁটা শরীরে বিদ্ধ না হয়। তখন উবাই (রা.) বললেন, ‘সেটাই তাকওয়া’। আসলে এভাবে যাবতীয় অন্যায় ও নিষিদ্ধ কাজ সচেতনভাবে পরিহার করে পবিত্র জীবন-যাপন করাই হলো তাকওয়ার লক্ষ্য। পুরো রমযান মাসের সিয়াম আমাদের সে প্রশিক্ষণই দিয়ে যায়। শুধু উপবাস বা পানাহার বর্জনই রোজার লক্ষ্য নয়। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স.) বলেছেন, “যে মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করতে পারলো না, তার পানাহার বর্জনের মধ্যে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।”

আমরা যখন মাহে রমযানকে স্বাগত জানাই তখন আমরা আসলে স্বাগত জানাই তাকওয়া তথা জবাবদিহিতার চেতনাকে। তাই রমযানে মিথ্যা কথা ও কাজ ত্যাগ করতে হবে আমাদের। প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে ঠকানো কিংবা খাদ্যে ভেজালের মাধ্যমে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনো রোজাদারের কাজ হতে পারে না। বিভিন্ন মুসলিম দেশে রমযানে দ্রব্যমূল্য হ্রাসের মাধ্যমে রোজাদারদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা হয। অথচ আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। রমযানে পণ্যদ্রব্যে ভেজালের সাথে সাথে মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়। এমন আচরণ তাকওয়ার চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। রমযানকে স্বাগত জানাতে গিয়ে আজ এ ত্রুটিগুলোর কথাও মনে পড়ছে। তাই রমযানকে আবেগের সাথে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি রমযানের চেতনা তথা ‘তাকওয়ার’ আলোতেও আমাদের আলোকিত হতে হবে। তা হলেই সার্থক হবে আমাদের রমযানের উদ্দীপনা।