ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্র নিয়ে প্রায়ই খবর ও প্রতিবেদন মুদ্রিত হয় গণমাধ্যমে। চিত্রগুলো তেমন সুখকর নয়। প্রায়ই দেশটির সাংবিধানিক চেতনাও লংঘিত হয়। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ ধারণাটি ক্রমেই মলিন হচ্ছে। ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার ঘিরে মুসলিমদের হয়রানি, শিরোনামে একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালনের সময় মুসলমানদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সূত্রপাত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষেÑ যা ‘বড় ওয়াফত’ দিবস নামে পরিচিত। সেখানকার স্থানীয় মুসলিমরা মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুদিন উপলক্ষে কানপুরের সৈয়দনগর এলাকায় ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা বড় ব্যানার প্রদর্শন করে। নবীর প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে করা এ ব্যানার নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। এ ব্যানার বহনকে কেন্দ্র করে মামলা দায়ের এবং কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। মামলার প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছেন মুসলমানরা। অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন মুসলমানরা। উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরে রোববার ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ ব্যানার নিয়ে মিছিল করার সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে গ্রেফতার করা হয় আটজনকে। উত্তর প্রদেশের উন্নাত্ততেও একই রকম ঘটনা ঘটে। এখানে ব্যানার নিয়ে মিছিল করার সময় গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রকাশ করার কারণে পুলিশি হয়রানি ও মামলার শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুসলমানরা।
এদিকে পুলিশের এফআইআরে বলা হয়, ‘আই লাভ মুহাম্মাদ’ ব্যানার লাগিয়ে মুসলমান সম্প্রদায় নতুন রীতি শুরু করার প্রচেষ্টা চালায় এবং অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ এর বিরোধিতা করে। শোভাযাত্রার সময় যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্বরত ছিলেন, তারাই এফআইআর দায়ের করেছেন। এতে আরো দাবি করা হয়েছে, শোভাযাত্রাকালে অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। দুসম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি করা এবং ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগও করা হয়েছে এফআইআরে। এ ধরনের এফআইআর মানুষের কাছে পরিচিত। পুলিশ আত্মপক্ষ সমর্থন করে, সরকারের ইশারায় কাজ করে। বিজেপি আমলের চালচিত্রতো মানুষের কাছে পরিষ্কার। এ আমলে মুসলিমরা বঞ্চনা ও নিগ্রহের শিকার। উগ্রবাদি হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণের বদলে সমর্থনই দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আলোচ্য ঘটনায়ও তা লক্ষ্য করা গেছে। এফআইআরে পুলিশ বলেছে, ‘আই লাভ মুহাম্মাদ’ ব্যানার লাগিয়ে মুসলমান সম্প্রদায় নতুন রীতি শুরু করার প্রচেষ্টা চালায় এবং অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ-এর বিরোধিতা করে। প্রশ্ন হলো, ব্যানার এবং ব্যানারে- কারো প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ কি বর্তমান সময়ে নতুন কোনো ব্যাপার? আর এমন শোভন কার্যক্রমে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ বিরোধিতা করবে কেন? ভারতে মুসলমানদের কি কোনো ধর্মাধিকার নেই? মুসলমানদের শোভন শোভাযাত্রায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা কিভাবে বিরোধিতা করলো, তার বর্ণনা কিন্তু এফআইআরে নেই। তবে বিশ্বের মানুষ জানে, কেমন হিংস্রতায় ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরোধিতা করে থাকে উগ্র হিন্দুরা। এফআইআরে দুসম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি ও ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগও করা হয়েছে মুসলামনদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বিষয়টি বোধোগম্য নয় যে, নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের ব্যানার কেমন করে শত্রুতা বৃদ্ধি ও ঘৃণা ছড়ানোর কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? আবারো প্রমাণিত হলো, ভারতের মুসলামানরা ধর্মাধিকার থেকে বঞ্চিত। আর বঞ্চনা ও নিগ্রহের কাজে যেসব উগ্র হিন্দুরা যুক্ত আছে, তাদের আইনের আওতায় আনার বদলে বরং সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সেখানকার পুলিশ।
এদিকে লক্ষেèৗতেও বেশ কয়েকজন নারী ‘আই লাভ মোহাম্মদ (সা.)’ ব্যানার নিয়ে রাজ্য বিধান সভার প্রবেশপথে বিক্ষোভ করেছেন। কিছু তরুণ তাদের মিছিলে যোগ দিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। ‘আই লাভ মোহাম্মদ (সা.)’ ব্যানার নিয়ে উত্তরাখণ্ড, গুজরাট, মুম্বাইসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ছোট ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে মুসলমানদের ‘টার্গেট’ করা এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার চেষ্টা হচ্ছে। এসব কি উগ্রতার লক্ষণ নয়?