DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

চাই সৎ প্রতিবেশিসূলভ আচরণ

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এর প্রধান কারণ হলো, শেখ হাসিনার শাসনাবসান ভারত যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।

Printed Edition

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। এর প্রধান কারণ হলো, শেখ হাসিনার শাসনাবসান ভারত যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকেও ভারত সে অর্থে স্বীকৃতি দেয়নি। আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত সব নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনকে ভারত স্বীকৃতি দিয়ে গেলেও জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব ও বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে ভারতের অনাগ্রহ ও আপত্তি বিগত ৭ মাসে নানাভাবেই দৃশ্যমান হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করা হয় ভারতের তরফ থেকে। কিন্তু সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। ভারতীয় মিডিয়াগুলো তখন থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ মাস হতে যাচ্ছে পরের মাসেই। এখন আর সেভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা শোনা যায় না। বাংলাদেশে হিন্দু-খ্রীষ্টানসহ সংখ্যালঘু কোনো সম্প্রদায়ই যে নিরাপত্তাহীণতায় ভুগছে না-এ সত্যটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচারে কোনো কমতি দেখা যায়নি।

এক সময়ে ভারত এ অপপ্রচারকে কিছু স্থানীয় মিডিয়ার তৎপরতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেও এটি পরিষ্কার যে, এই অপপ্রচারের নেপথ্যে ভারতের প্রশাসনেরও সমর্থন রয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হয়েছে, সে পরওয়ানা ভারতে পৌঁছানো হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণসহ জাতিসংঘ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বিশেষ করে দু’দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি থাকার পরও ভারত শেখ হাসিনাকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেনি। ভারত উল্টো তার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। ভারতের এমন ভূমিকাগুলোর মধ্য দিয়ে দেশটির বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যায়।

এত কিছুর পর আবার সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের বাকযুদ্ধে জড়িয়েছেন। গত রোববার দিল্লীতে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে ঢাকা কী ধরনের সম্পর্ক চায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশের মনস্থির করা দরকার। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এ বক্তব্যের পাল্টা জবাবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “অবশ্যই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। একইভাবে ভারতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। এটা দু’পক্ষেরই বিষয়, এটা বলাতে দোষের কিছু নেই।” পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরো বলেছেন, আমরা ভারতের সঙ্গে গুড ওয়ার্কিং রিলেশনস চাই। আমরা চাই একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং যার যার আগ্রহের বিষয় আছে, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অস্পষ্টতা নেই।

তবে ভারতের সরকারের ভেতর থেকেও প্রভাবশালী অনেকেই বাংলাদেশ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন বলে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে বিপ্লবোত্তর সময়ে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘ ফোর্স প্রেরণের কথা বলেছিলেন। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের একাধিক সদস্য অহরহ বাংলাদেশ-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আর ভারতের মিডিয়ার বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান তো আছেই। ভারতের রিপাবলিক টিভির একজন বিতর্কিত উপস্থাপক ময়ূখরঞ্জন ঘোষ সম্প্রতি একটি স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ থেকে শহীদ মিনার তুলে নিয়ে ভারতের কলকাতায় স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন। তার ভাষায় বাংলাদেশ এখন আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো হয়ে গেছে।

এরকম উস্কানিমূলক মন্তব্য ও প্রচারণার পর ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো করা কঠিন। তারপরও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখন ভারতকেই ঠিক করতে হবে তারা এ সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে কোনদিকে নিতে চায়। তারা কী বাংলাদেশের কোনো একটি দলের সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নাকি বাংলাদেশের মানুষ বা সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নেই বেশি আন্তরিক? সবচেয়ে বড়ো কথা পারস্পরিক আস্থাই হলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ভারতকে তাই বড়োভাইসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে আস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে অগ্রসর হতে হবে।