খুচরা বাজারে চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এটা নিম্ন আয়ের মানুষের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ‘হুহু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম’ শিরোনামে সহযোগী একটি দৈনিকে ৫ জুলাই প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বৃষ্টির অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম ও সবজির দামও বাড়ানো হয়েছে। বাদ যায়নি মসলারও। এ কারণে শুক্রবার ছুটির দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসে অস্বস্তিতে ভোগেন ক্রেতারা। এদিন রাজধানীর কাওরানবাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুচরা বাজারে গত এক মাস ধরেই বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৮৭ টাকা; যা এক মাস আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা; যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা; যা এক মাস আগে ৮৫ টাকা ছিল। বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা; যা আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা; যা এক আগে ৫৫ টাকা ছিল। এতে বলা হয়, এরই মধ্যে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ঈদের পর থেকেই মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ায় ক্রেতারা মৌসুমেও বাড়তি দামে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোট দানার মশুর ডাল সর্বনিম্ন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগেও ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি; যা এক সপ্তাহ আগে ১৪০ টাকা ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বেড়েছে ডিমের দাম। শুক্রবার প্রতিহালি (৪ পিস) বিক্রি হয় ৪৬ টাকা; যা গত সপ্তাহে ৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে চিচিঙ্গা কেজিকে ১০-২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা এবং পেঁপে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০-১৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা আর আলু কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। বাজারে কিন্তু সরবরাহের তেমন ঘাটতি নেই। বন্যা এ বছর তেমনটা হয়নি। অতিবৃষ্টির দোহাই দেয়া হলেও তা এ সময়ে দেশের সাধারণ দৃশ্য। এ সময়ে এসে মূল্য বাড়ানো হলেও গত ঈদের সময়টাতে এই মূল্য অনেক কম ছিল। গত রমজানের সময়েও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকায় উপকার পেয়েছে সাধারণ মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সাফল্যে সবাই খুশি হয়েছিল। আমরা মনে করি বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের এই বৃদ্ধির নতিজা ভাল নয় কারো জন্যই। সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। কেন হঠাৎ করে সব পণ্যের দাম এভাবে লাফিয়ে বাড়ছে সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।
বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। চাহিদা মেটাতে তারা সংকটে পড়ে। জানা যায়, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও নীরবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা। সিন্ডিকেটের কথাও শোনা যায়। তার অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে বিষয়টিতে নজর দেয়া। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যে কোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের এই উল্লম্ফন রোধ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা ধরে রাখা দরকার বলে আমরা মনে করি।