বর্তমান সভ্যতায় নৈতিকতা, সততার পতন আগেই ঘটেছে। এখন তো চক্ষুলজ্জার বিষয়টিও উধাও হয়ে গেছে। পরাশক্তি হতে পারলে এখন বোধহয় যা ইচ্ছে বলা যায়, যা ইচ্ছে করা যায়। এমন কী প্রতিবেশী দেশের অতিথি প্রধানমন্ত্রীকে দেশ বিক্রির প্রস্তাবও দেওয়া যায়! এমনটাই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমরা জানি, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন মার্ক কার্নি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র দু’সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। ওই বৈঠকেও কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মনোভাবের বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন-কানাডা বিক্রির জন্য নয়, আর কখনো বিক্রি হবে না। ওই বৈঠকে আমেরিকা ও কানাডার মধ্যকার সীমান্তকে ‘কৃত্রিম’ বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে কানাডাকে আমেরিকার সঙ্গে যোগদানের ধারণাকে ‘অসাধারণ সুবিধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যেরই জবাব দিয়েছিলেন কার্নি। তবে এতে দমে যাননি ট্রাম্প। পাল্টা জবাবে তিনি বলেন, ‘কখনো এ কথা বলবেন না যে, কখনোই হবে না। সময়ই বলে দেবে।’ ট্রাম্প যে চেতনায় একজন সাম্রাজ্যবাদী, এই বক্তব্যে তা আবার স্পষ্ট হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকের শুরুতে কার্নিকে বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা ও অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। কিন্তু কানাডা প্রসঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ দু’প্রতিবেশীর মধ্যে এখন সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে কানাডা তা না মানায় গত মার্চ মাসে দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেন ট্রাম্প। পাল্টা শুল্কারোপ করে কানাডাও। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, মার্ক কার্নি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে জোরালোভাবে বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পের আগ্রাসী ইচ্ছার বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়াবেন। তার এই মনোভাবই তাকে জয়ের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। জনতার এ রায় কানাডার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছে।

নিজেকে মনেপ্রাণে একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার বলে দাবি করা ট্রাম্প বৈঠকে কার্নিকে বলেন, দু’দেশকে একত্রে দেখলে মনে হয় এ ‘কৃত্রিম’ রেখাটির সরিয়ে ফেললে ভালো হয়। এর বিপরীতে কার্নি বলেন, রিয়েলে এস্টেট সম্পর্কে ট্রাম্প ভালো বুঝলেও এমন কিছু স্থান আছে, যা কখনোই বিক্রির জন্য নয় এবং কখনো বিক্রি হবে না। বাকিংহাম প্যালেস বা ওভাল অফিসের মতো কানাডার অবস্থানও একই ধরনের। কার্নি তার বক্তব্যে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তবে ট্রাম্পের বক্তব্যে একজন প্রেসিডেন্টের বদলে একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার-এর চরিত্র বড় হয়ে উঠেছে। শুধু এখানে নয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এবার গাজার ক্ষেত্রেও তিনি একজন ডেভেলপার-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনীদের তিনি গাজা ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন, কারণ সেখানে তিনি আবাসন ব্যবসা শুরু করবেন, আরবদেরও তিনি যুক্ত হতে বলেছিলেন। তবে তার আহ্বানে কেউ সাড়া দেননি। ভাবতে অবাক লাগে, একজন প্রেসিডেন্ট কি করে ডেভেলপার হয়ে যান?