DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

সম্পাদকীয়

ছিনতাইকারীর মব জাস্টিস!

পৃথিবীর পরিবেশ একরকম থাকে না। দেশের পরিবেশ কি একরমক থাকে? একরকম থাকে না বলেই তো আমরা দেশে-দেশে লক্ষ্য করি গণঅভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লবের চিত্র। দেশ যখন ঠিকভাবে চলে না, তখন ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নেমে আসে রাজপথে।

Printed Edition
Default Image - DS

পৃথিবীর পরিবেশ একরকম থাকে না। দেশের পরিবেশ কি একরমক থাকে? একরকম থাকে না বলেই তো আমরা দেশে-দেশে লক্ষ্য করি গণঅভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লবের চিত্র। দেশ যখন ঠিকভাবে চলে না, তখন ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নেমে আসে রাজপথে। দ্রোহের পরিণতিতে কখনো হয় অভ্যুত্থান, কখনো বা বিপ্লব। তবে রক্তক্ষয়ী পরিবর্তনের পরপরই জনতার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায় না। বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা হয়। অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার প্রচেষ্টা চালায় ফ্যাসিবাদের দোসররা। এমন চিত্র আমরা লক্ষ্য করেছি ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনে। ফলে বলা চলে, গণঅভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লবের পরও সবকিছু সহসা ঠিক হয়ে যায় না। কাংখিত ফল লাভ নির্ভর করে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর যোগ্যতা, নৈতিকতা ও সঙ্গত কর্মসূচীর ওপর। এখানে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর প্রিয় বাংলাদেশ এখন অবস্থান করছে কালান্তরের এক মোহনায়। দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভেতরের এবং বাইরের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে। এছাড়া আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনীতির অশনিসংকেত তো আছেই।

এমন বহুমাত্রিক বাতাবরণে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্টভাবে এগুতে হবে আমাদের। প্রসঙ্গত এখানে ‘মব জাস্টিস’র কথা উল্লেখ করা যায়। অনেকে এর পরিবর্তে বলতে চান ‘মব এনার্কি’। এটি কোনো ভালো বিষয় নয়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সংকটের অভাব থাকে না, মব এনার্কি তখন বাড়তি আপদ হিসেবে দেখা দেয়। আইন-শৃংখলা বাহিনীর দুর্বলতার কারণে সুযোগ সন্ধানী কিছু মানুষ মব এনার্কি সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। এদের আচরণে জনমনে হতাশার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফ্যাসিবাদের দোসররাও এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে যায়। কারণ গণআকাংখার সরকারকে বিব্রত করতে পারলে তো পতিত ফ্যাসিস্টদের লাভ। মব জাস্টিসের নানারূপ লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো রাজনৈতিক গ্রুপ ও মহল থেকে এটা লক্ষ্য করা যায়। এখন তো ছিনতাইকারীদেরও মব এনার্কি করতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর গুলশান এলাকায় এমন ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার জুয়েল রানা নামের এক ব্যক্তি লোক জড়ো করে (মব) মাহবুব আলম নামক এক ব্যক্তিকে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করেছে এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি গাড়ি চালিয়ে গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ নম্বরের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি গুলশান-১ নম্বরে সিগন্যাল অমান্য করে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ গাড়ির সামনে এসে পড়ায় আমি হর্ন বাজিয়ে গাড়িটি ব্রেক করি। তখন ওই ব্যক্তি (জুয়েল রানা) গাড়ির বনেটে জোরে থাপ্পড় দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘গুলশান তার এলাকা। এখানে তিনি যখন খুশি, যেভাবে খুশি সেভাবেই রাস্তা পার হবেন।’ এরপর মাহবুব আলম গাড়ি থেকে নেমে ট্রাফিক সার্জেন্টকে ডাকতেই জুয়েল দৌড়ে এসে তার শার্টের কলার টেনে ধরেন। এরপরের ঘটনা কম বলাই ভালো। ট্রাফিক সার্জেন্ট যেন অসহায়। কিল-ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করা হয় মাহবুব আলমকে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। জুয়েল চিৎকার করে লোক জড়ো করে এবং গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। বলে, ‘আমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছে’।

ঘটনায় মামলা হয়েছে। এক পুলিশ সদস্য গুলশান থানার ওসিকে বলেছেন, লোকটি গুলশান-১ নম্বরের চিহ্নিত নেশাখোর ও ছিনতাইকারী। ছবি দেখে এক তরুণী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিনতে পারেন এবং বলেন, ‘২৩ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যক্তি আরও তিনজনসহ গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কের সামনে ছিনতাইয়ের জন্য আমার গলায় ছুটি ধরেছিলেন’। এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, পুলিশ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে সমর্থ নয়। বিপরীতে অপরাধী ‘মব’ সৃষ্টি করে নাগরিকের ওপর হামলা চালাতে পারেন। এখন মানুষকে ভেবে দেখতে হবেÑতারা কি ‘মবে’ যোগ দিবেন, নাকি অপরাধীকে প্রতিরোধ করবেন?