যখন পত্রিকায় শিরোনাম হয়, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে’, তখন উপলব্ধি করা যায় আমরা ভালো নেই। আমরা ভালো নেই কেন, এর জন্য দায়ী কারা? প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে উপলব্ধি করা যায়, তখন যুদ্ধের জন্য কারা দায়ী ছিল। সে মহলই এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মোটা দাগে বলা যায়, যারা বিশ্বব্যবস্থার শাসক, যারা ভূরাজনীতির কারিগর, যুদ্ধ-মহাযুদ্ধের দায় তাদের ঘাড়েই বর্তায়। ২৮ মে এএফপি ও রয়টার্স পরিবেশিত একটি প্রতিবেদনেও তেমন বার্তাই পাওয়া যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ না নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘আগুন নিয়ে খেলছেন’। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ট্রাম্পের এমন মন্তব্য আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে তিনি এমন প্রতিক্রিয়া জানান। মেদভেদেভ আরও বলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে ‘সত্যিকার অর্থেই খারাপ’। এসব বয়ানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকির কথা জানা গেল, আরও জানা গেল ট্রাম্প-পুতিনের হানিমুন পিরিয়ডের সমাপ্তির কথা। সম্প্রতি পুতিনকে উদ্দেশ করে নিজের মালিনাকাধীন সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি হস্তক্ষেপ না করলে রাশিয়ায় ইতিমধ্যে সত্যিই ভয়াবহ কিছু ঘটে যেত। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের জবাবে দিমিত্রি মেদভেদেভ এক্সে লিখেছেন, ট্রাম্প পুতিনের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ এবং রাশিয়ায় ‘সত্যিই খারাপ ঘটনা’ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ‘আমি একটাই সত্যিকারের ভয়াবহ ঘটনা বুঝি। আর সেটা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আশাকরি ট্রাম্প বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’
এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সংলাপে বসতে চান। জেনেলক্সি বলেন, ‘রাশিয়া না থামলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প। আমরা তার সঙ্গে দু’টি প্রধান বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি-এর একটি জ¦ালানি, অপরটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র এ দু’খাতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে কিনা, আমি সেটা দেখতে চাই।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সমি অঞ্চলে ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। ওই এলাকায় মস্কোর সেনাবাহিনী বেশ কিছু বসতি দখল করেছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরে একটি বাফার জোন তেরি করতে রাশিয়া এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
জেলেনস্কির ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ। গত বুধবার তিনি বলেন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে ‘সুস্পষ্ট চুক্তি’ হলেই পুতিন, জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘(রুশ ও ইউক্রেনীয়) প্রতিনিধিদলের মধ্যে নির্দিষ্ট চুক্তি হলেই কেবল এ ধরনের বৈঠক হতে পারে।’ এখন প্রশ্ন জাগে, ‘নির্দিষ্ট চুক্তি’ সম্পন্ন হলে ত্রিপক্ষীয় কোনো বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা থাকবে কী? আর ‘নির্দিষ্ট চুক্তিতে’ ইউক্রেন সম্মত হবে কী? তাহলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি থেকেই যাবে?