বৃটিশরা আমাদের এ উপমহাদেশ ছেড়ে গেলেও রেখে গেছে নানা সংকট। কাশ্মীর সে সংকটের একটি। কাশ্মীর সংকটের কারণেই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলাকে ঘিরে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে ভারত ও পাকিস্তান। আমরা জানি, যুদ্ধের সময় মানুষ সঠিক তথ্য জানতে চায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এ সময় তথ্য তেমন পাওয়া না গেলেও প্রোপাগাণ্ডা ও ভুল তথ্য পাওয়া যায় প্রচুর। এবার ভারতের গণমাধ্যম সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে, যেন যুদ্ধ উন্মাদনায় ভাসছে। পাক-ভারত যুদ্ধের প্রকৃত তথ্য সেখানে পাওয়া যায় না। ভারতীয় মিডিয়া শুধু যে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে তা নয়, গাজা যুদ্ধের ছবিকে পাকিস্তানে হামলার ছবি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, আজতাক, এনডিটিভির মতো মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোও এ ধারার বাইরে নয়। ফলে অবিরাম মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কারণে হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছে ভারতীয় মিডিয়াগুলো। ইন্ডিয়া টুডের একটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘ইন্ডিয়া হিটস করাচি ফার্স্ট টাইম সিন্স নাইনটি সেভেনটি ওয়ান।’ অথচ করাচি বন্দরে হামলার কোনো খবর পাকিস্তান বা বিশ্বের আর কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়নি। আজতক টিভির এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির গ্রেফতার হয়েছেন। টাইমস নাউ ও রিপাবলিক টিভির খবরে বলা হয়, পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। জি নিউজের এক খবরে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। রিপাবলিক টিভির আরেকটি শিরোনাম ছিল, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বড় ধরনের বিস্ফোরণ। এসব ভুয়া খবর ছড়ানোর কারণে ভারতের মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এতে ভারতের কোনো উপকার না হলেও ক্ষতি হয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোর। বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ওরা পরিণত হয়েছে হাসির পাত্রে।

ভুয়া খবর ছড়ানোর এমন প্রতিযোগিতার মধ্যে যেসব মিডিয়া কিছুটা সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছে সেগুলোর ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। এ প্রসঙ্গে ‘দ্য ওয়ার’-এর কথা উল্লেখ করা যায়। সংবাদ মাধ্যমটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের সংবিধানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে দেশ জুড়ে দ্য ওয়ারের একসেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০০০-এর অধীনে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ‘দ্য ওয়ার’ ব্লক করে। এর আগে ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর প্রকাশ করার পর সরকারের চাপের মুখে ‘দ্য হিন্দু’ খবরটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। বিষয়টি জানায় লন্ডনের টেলিগ্রাফ।

উল্লেখ্য, ভারতের মানুষ যাতে যুদ্ধের প্রকৃত খবর জানতে না পারে, সে জন্য পাকিস্তানভিত্তিক খবরের প্রায় সব উৎস বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি। এমনকি রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরার মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর এড়িয়ে যাচ্ছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো। ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যখন নিশ্চিত খবর প্রকাশ করে, তখন ভারতের ‘গদি মিডিয়া’ এমন খবরকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়। ভারতের গদি মিডিয়ার সাথে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় ঘটেছে আর একটু আগে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের ‘গদি মিডিয়া’ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শুরু করে নানামুখী মিথ্যা প্রচারণা, যার একটি ছিল ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন।’ আখেরে এসবে কোনো কাজ হয়নি। মিথ্যা কখনো সত্য হয় না। তবে এসব করতে গিয়ে ভারতের মিডিয়ার মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, বড় ক্ষতি হয়েছে।