বেশ কিছুদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতে বসবাসরত নাগরিকদের অবৈধ আখ্যা দিয়ে পুশ ইনের নামে এক অমানবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ফলে এটি একটি নতুন আপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম অনলাইন জানাচ্ছে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত আরও ৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ‘পুশইন’ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী চারটি এলাকা দিয়ে এ অবৈধ পুশইনের ঘটনা ঘটে। ৪৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সিইও লে. কর্নেল নাজমুল হাসান নিশ্চিত করেছেন যে, আটককৃতদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী এবং ৩০ জন শিশু রয়েছে। আটককৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

বিজিবি সূত্র জানায়, বুধবার রাতে জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি ও মিনাটিলা সীমান্ত দিয়ে ৪০ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। এ সময় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিজিবি তাদের আটক করে। একই রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কালাইরাগ সীমান্ত দিয়ে আরও ১৩ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়, যাদেরকেও বিজিবি আটক করেছে। সব মিলিয়ে, এক রাতেই সিলেট জেলার তিনটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৫৩ জন পুশইনের ঘটনা ঘটেছে। একই রাতে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে আরও ১৭ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এসব ব্যক্তিদেরও বিজিবি আটক করেছে। সব মিলিয়ে, সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী চারটি এলাকা দিয়ে এক রাতেই ৭০ জনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুশইন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা সীমান্ত এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।

তাদেরকে বাংলাদেশী নাগরিক দাবি করা হলেও তারা আসছে ভারত থেকে। তারা এতদিন সে দেশে বসবাস করেছে। তারা বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে থাকলে নিয়ম মেনে বিজিবির কাছে তাদের হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে রাতের অন্ধকারে।

ভারত যাদের পুশইন করেছে তাদের ওপর নির্মম নিপীড়ন ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের শরীরে নিষ্ঠুরতার ছাপ ফুটে উঠেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ভারতের বিএসএফকে বারবার পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে পুশইন বন্ধ করার তাগিদ দিলেও তারা শুনছে না, পুশইন করেই চলেছে।

একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদেরই ভূখণ্ড থেকে তুলে নিয়ে অন্য দেশে চালান করে দিচ্ছে ভারত। এভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মুসলমানদের পণবন্দী বানানোর পাশাপাশি নিজ দেশের ইস্যুকে আন্তসীমান্ত দ্বন্দ্বে পরিণত করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। মুসলমান ভারতীয়দের গলা ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর এ কাজটি দিল্লি করছে জুলাই ২০২৪ বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে। ঢাকার প্রতি বৈরী নীতির অংশ হিসেবেই যে এই উদ্যোগ, সেটা না বোঝার কিছু নেই।

ভারত এখন বলতে চায়, ‘পুশইন’ করানো ব্যক্তিরা তার দেশে অনুপ্রবেশকারী এবং অনেকে অনেক দিন ভারতে বসবাস করলেও তারা সেখানকার বৈধ নাগরিক নয়। কিন্তু বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের দিকে ‘পুশইন’ করা মুসলমানেরা ভারতের নাগরিক।

প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সীমান্তে লোকজনকে জোর করে ঠেলে (পুশইন) বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এই সংখ্যা হাজারের কোঠা অতিক্রম করেছে। আমরা মনে করি বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বিজিবির গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। এই অশুভ তৎপরতা বন্ধে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।