গাজাকে নিয়ে হার্ড নিউজতো প্রতিদিনই হয়। সেসব নিউজে হত্যা, ধ্বংস, নিষ্ঠুরতা ও যুদ্ধাপরাধের নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে; তবে মানুষের জীবন তেমন উঠে আসে না। ফিচারে কিছুটা উঠে আসে। গাজা নামক যে জনপদ, সে জনপদের কোনো সংবেদনশীল মানুষ যদি আত্মজৈবনিক একটি উপন্যাস রচনা করতেন, তবে সেটা হয়তো বিশ্বসাহিত্যের বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতো। এমন উপন্যাসের তো নোবেল পুরস্কার না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বীভৎস পরিবেশ ও অস্বাভাবিক জীবন-যাপনের কারণে এখন হয়তো কাক্সিক্ষত সে উপন্যাসটির প্রকাশ আমরা লক্ষ্য করছি না। তবে উপন্যাসের উপাদান ও চরিত্র তো পুরো গাজায় ছড়িয়ে আছে। অতএব যুগন্ধর সেই উপন্যাস রচিত ও প্রকাশিত না হওয়ার কোনো কারণ নেই। শুধু সময়ের অপেক্ষা ফিলিস্তিনি সাহিত্যিকদের সুনাম আছে। গোলা-বারুদ ও আগ্রাসনের পরিবেশেও তাদের সাহিত্যকর্ম বন্ধ হয়নি। তাদের কবিতা ও বিভিন্ন রচনা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা কালজয়ী সে আত্মজৈবনিক উপন্যাসটির অপেক্ষায় থাকবো। দেশে দেশে বিদগ্ধ মানুষের হাতে হয়তো থাকবে সেই উপন্যাসটি।
২২ মে সিএনএন পরিবেশিত ফিচারধর্মী একটি লেখা লক্ষ্য করলাম ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে। গোলাপি রঙের সোয়েটার পরা। সোয়েটারটি কাঁধের অংশ থেকে ঝুলে পড়েছে; কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ১২ বছর বয়সী কিশোরী জানার। সে তখন উত্তর গাজায় ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে দ্রুত হাঁটছে। হাতে প্লাস্টিকের একটি বড় গামলা। উদ্দেশ্য একটাই-পরিবারের জন্য খাদ্য ও পানি খুঁজে বের করা। কিশোরীটির পুরো নাম জানা মোহাম্মদ খলিল মুসলেহ আল-স্কেইফি। সে জানিয়েছে, বছরখানেক আগে ইসরাইলি স্লাইপারের গুলিতে তার বড় ভাই প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর থেকেই পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাকে। গাজা সিটির একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ছিল জানা। সেখানেই তার সাথে কথা হয় সিএনএন সাংবাদিকের। জানা জানায়, ‘আমি শক্তিশালী হতে চাই, যেন আমার বাবা কষ্ট না পান। আমার বাবা বয়স্ক, তিনি হৃদরোগে ভুগছেন।’ জানা দু’বালতি পানি নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যায়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে তার গোড়ালি সাদা হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর গাজায় নৃশংস হামলা চালায় ইসরাই। এরপর গাজায় খাদ্য ও পানি সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর অপুষ্টির কারণে অন্তত ৫৭ শিশু মারা গেছে। জানার ভাতিজি জান্নাত তাদেরই একজন। জন্মের সময় জান্নাতের ওজন ছিল ২ কেজি ৬০০ গ্রাম। তার মা আয়া বলেন, শিশুটি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ভেঙে ২ মার্চ অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল। ফলে জরুরি ওষুধ, ফর্মুলা দুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়। আয়া বলেন, খাবারের সঙ্কট শুরু হলে জান্তাতকে বুকের দুধ খাওয়াতে হিমশিম হন। ফলে জান্নাতের ওজন কমতে শুরু করে। শিশুটি দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তার কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানান, জান্নাতকে সুস্থ করতে বিশেষ ধরনের দুধ প্রয়োজন। কিন্তু গাজায় সে দুধ পাওয়া যায়নি। জান্নাতের মা বলেন, চিকিৎসকেরা বিদেশে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। পরিবারটি প্রয়োজনীয় কাগপত্র সংগ্রহ করছিল, কিন্তু এর মধ্যেই ৪ মে ছোট্ট মেয়েটি মারা যায়। এই হলো আমাদের সভ্যতার চিত্র, যার শাসক যুক্তরাষ্ট্র, সাথে রয়েছে যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র ইসরাইল।