‘বিনাশ’ কোনো ভালো শব্দ নয়। আর ‘বনবিনাশ’-এর কাজটা তো বেশ মন্দ কাজ। যারা এর সাথে জড়িত তারাও ভালো মানুষ নয়। বাংলাদেশের বনবিনাশ ও দখল নিয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রথমত বনভূমি যা দরকার ছিল, সেটা কম। আবার যা আছে, তাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশে যত রকমের দস্যু আছে, এত বিচিত্র ধরনের দস্যু আর কোথাও নেই। বনদস্যু, জলদস্যু, পাহাড় দস্যু ও ভূমিদস্যু। এটার কারণ হলো আমাদের খুব স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদ। গত রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। ‘বনবিনাশ, বনায়ন অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূমিগ্রাস থেকে বননির্ভর মানুষের সুরক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের এ ‘যাত্রা শুরু কর্মশালা’র আয়োজন করে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড)। অধ্যাপক মাহমুদ বলেন, যতটুকু বনভূমি আছে, সেটা রক্ষা করাও কঠিন। চা-বাগানে গাছের শেড খুবই দরকারি। কিন্তু সিলেটের চা-বাগানগুলোর শেডগুলো বনদস্যুরা নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেগুলো সরকারি চা-বাগান। যার কারণে চায়ের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহুমদ বলেছেন, বাংলাদেশে যত রকমের দুস্য আছে, এত বিচিত্র ধরনের দস্যু আর কোথাও নেই। অর্থাৎ দস্যুবৃত্তির বেশ বিকাশ ঘটেছে বাংলাদেশে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে আসলেই দেশে দস্যুবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে। জনগণ অধিকার বঞ্চিত হয়েছে, প্রকৃতি-পরিবেশও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে দস্যুবৃত্তির জন্য শক্তি প্রয়োজন, ক্ষমতা প্রয়োজন। সরকারের প্রশ্রয়ে এসব পেয়েছে মন্ত্রী, আমলা ও সরকারী ঘরানার লোকজন। অধ্যাপক মাহমুদ এখানে বিশেষ করে বনদস্যুদের কথা বলেছেন, এরা সিলেটের চা-বাগানগুলোর শেডগুলো নিয়ে যাচ্ছে। ফলে চায়ের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। বনদস্যুরা বনের ভূমি গ্রাস করছে। সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের প্রকৃতি ও জলবায়ু। এসব দেখার জন্য তো সরকার ছিল, কিন্তু তারা দেখেনি। বরং যেসব মন্ত্রী বাহাদুরদের এ ক্ষেত্রে কর্তব্য পালন করার কথা ছিল, তারাই আবির্ভূত হয়েছেন ভূমিদস্যু হিসেবে। এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কথা উল্লেখ করা যায়।
ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকা প্রয়োজন। কিছু কাজ তো এ সরকারকে করতে হবে। বর্তমান সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন করেছে, কিন্তু বন নিয়ে তেমন কোনো কথা নেই। বন নিয়ে সংস্কার কমিশনও নেই। আমরা জানি, একটি দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। এক সময় ১০ ভাগ ছিল, এখন আরও কমেছে। এর প্রভাব পড়বে প্রকৃতি, জলবায়ু ও জনজীবনে। ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠী ও বননির্ভর মানুষের জীবন-জীবীকার দিকে তাকাতে হবে সরকার ও প্রশাসনকে।